স্টাফ রিপোর্টার: মাঘ মাস আসার আগেই এই পৌষের শেষ দিকে হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে ছোট সোনামণি শিশুদের। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের লম্বা লাইন। এসব লাইনে এক বছরের শিশু থেকে ১০ থেকে ১২ বছরের বাচ্চাও রয়েছে। ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে এসব শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তাদের অভিভাবকরা।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশব্যাপী চলমান শৈত্যপ্রবাহ ও তীব্র শীতের কারণে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। রাস্তায় ধুলোবালি বেশি থাকায় যে সব শিশুর অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তাদের সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যায়। এ সময় বাসাবাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় আবদ্ধ ঘরে সূক্ষ্ম ধূলিকণা বাতাসের মাধ্যমে শিশুদের নাকমুখ দিয়ে ঢুকে রোগাক্রান্ত করে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে সারাদেশে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছেন দুর্ভোগে। তারাই শীতের প্রকোপে বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, অক্টোবর থেকে ঠাণ্ডাজনিত কারণে রোগী আসছে। গত কয়েক দিন শীত বাড়ায় শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা হাসপাতালে আসছেন।
চিকিৎসকরা জানান, শীতের প্রকোপ বাড়ায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে শিশুদের রোগবালাইও বেড়েছে। মরসুমি এসব রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে জরুরি বিভাগে আসছেন অভিভাবকরা। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শিশু রোগী শীতের কারণে জানুয়ারির শুরু থেকেই দ্বিগুণের বেশি আসছে। প্রতিদিন যেখানে ২০০ থেকে ২৫০ শিশু রোগী আসতো, সেখানে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী আসছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুদের অনেককেই বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার প্রয়োজন হলে বেশি অসুস্থ শিশুদের ভর্তিও করতে হচ্ছে। তবে আইসিডিডিআরবিতে শীতের শুরুতে রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। শীতের শুরুতে ৫ বছরের নিচে লোটা ভাইরাস ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু বেশি ভর্তি হয়েছে। তবে বর্তমানে রোগীর চাপ কমে গেছে বলে জানায় আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরে দেখা গেছে, শিশু বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছোট ছোট অসুস্থ শিশুদের কোলে নিয়ে বাবা-মায়েরা টিকিট কাটতে দাঁড়িয়ে আছেন। বেশিরভাগ শিশুর অভিভাবক জানালেন, তাদের সন্তানরা শ্বাস প্রশ্বাসজনিত নানা সমস্যায় ভুগছে। হাসপাতালের আউটডোরে গড়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন শিশু রোগী আসছে। শিশুরা প্রধানত তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত সমস্যায় ভুগছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীর শতকরা ৫০ ভাগই ভাইরাল ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত। তবে বেশিরভাগ শিশুকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় শিশুদের প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঘর ঝাড়ু দেয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিংবা বিছানা করার সময় শিশুদের ঘরের বাইরে রেখে কাজ করতে হবে। ঘরের বাইরে বের হলে শিশুদের মাস্ক ব্যবহার করাতে হবে। হালকা গরম পানি দিয়ে দু’একদিন পরপর গোসল করালে শিশুরা ভালো থাকবে। এ ছাড়া তেলের চেয়ে লোশন ব্যবহারেও শিশুরা ভালো থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।