ঝিনাইদহে প্রবাসী স্বামীর পাঠানো অর্থ হাতিয়ে অন্যের সাথে ভেগে যাচ্ছেন স্ত্রীরা !

জাহিদুর রহমান তারিক: ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রামে সুখের আশায় বিদেশ গিয়ে গচ্ছিত টাকা, সোনা দানা ও স্ত্রী সন্তান হারিয়ে পথে বসছে এক শ্রেণির যুবক। এতে সামাজিক সংকটের পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে পারিবারিক বিরোধ। দীর্ঘদিন যাবৎ স্বামী বিদেশ থাকার কারণে ঘরে থাকা যুবতি স্ত্রীরা হচ্ছে বিপথগামী। পরকিয়ায় জড়িয়ে কতিপয় স্ত্রী বিদেশ থেকে স্বামীর পাঠানো টাকা নিয়ে ঘর বাঁধছে অন্য পুরুষের সাথে। এমন একাধিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও থানা পুলিশ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোবিন্দপুরের বাবুল দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকেন। তিনি নিজের কষ্টার্জিত টাকা পাঠাতেন স্ত্রী সাগরির কাছে। তিল তিল করে জমানো স্বামীর টাকা নিয়ে এক সময় সগারি নিরুদ্দেশ হয় বাবার বাড়ির গ্রামের মধ্য বয়সী এক পুরুষের সাথে। সদর উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামের সাবদার হোসেনের স্ত্রী রেহানা খাতুন স্বামীর পাঠানো টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায় একই গ্রামের নইমুলের ছেলে পিন্টুর সাথে। নগরবাথান যাদবপুর গ্রামের সুজনের স্ত্রী স্বামীর পাঠানো ১০ লাখ টাকা নিয়ে অন্যের ঘরে ওঠে। হরিণাকু-ু উপজেলার সোনাতনপুর গ্রামের সফিউর রহমানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন স্বামীর পাঠানো ৫ লাখ টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়ে। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা বাজারের মাগুরাপাড়ার আনিছুর রহমান থাকেন ওমানে। দু’বছর আগে সোনালী খাতুনের সাথে আনিছুরের বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে ৮ মাসের একটি বাচ্চাও আছে। অথচ স্ত্রী সোনালী খাতুন স্বামীর পাঠানো অর্থ নিয়ে ফুফাতো ভাই তাজমুলের হাত ধরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে হরহামেশাই এমন ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো স্ত্রী পারিবারিক মধ্যস্থতায় স্বামীর ঘরে ফিরলেও অনেক স্ত্রী আবার ফিরছেন না। এ নিয়ে থানা কোর্টকাচারী করছেন সাবেক স্বামীর স্বজনরা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নে এ রকম প্রায় ৩-৪টি ঘটনা ঘটেছে। স্বামী বিদেশ থাকার কারণে স্ত্রীরা অন্যের সাথে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সামাজিক বন্ধনের অভাব ও ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে এমনটি ঘটছে বলে তিনি মনে করেন। ঝিনাইদহের সাগান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন বলেন, তার ইউনিয়নেও ২-১টি এমন ঘটনা আছে। তিনি মনে করেন স্বামী বিদেশ থাকায় জৈবিক কারণে এমন ঘটনার সূত্রপাত। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের এসআই হাসানুজ্জামান জানান, শুক্রবারও একটি সামাজিক বিরোধের মিমাংসা করা হয়েছে তার দফতরে। মেয়েটি আগের স্বামীকে ছেড়ে পরের স্বামীর কাছে যেতে ইচ্ছুক হওয়ায় সেভাবেই মিমাংসা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ নারী ও শিশু আদালতের বিশেষ আইন কর্মকর্তা অ্যাড. আব্দুর রশিদ জানান, এ ধরনের কেসগুলো গ্রাম আদালত বা ইউপি চেয়ারম্যানরাই বেশি মিমাংসা করে থাকেন। ধর্মীয় নেতাদের ভাষ্যমতে যুবক বয়সে ঘরে যুবতি স্ত্রী রেখে দেশের বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। আর সে কারণে শুধু ঝিনাইদহ কেন, প্রায় জেলাতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি ব্যুরোর সহকারী পরিচালক সবিতা রানী মজুমদার জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে ঝিনাইদহের মানুষ বিদেশে যাওয়া আসা করছে। ২০১৭ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ জেলা থেকে ৬০ হাজার ৭৮৭জন পুরুষ ও ৬ হাজার ৭৫৬জন নারী বিদেশে কাজ করছেন। সর্বমোট জেলা থেকে ৬৭ হাজার ৫৪৩জন বিদেশে অবস্থান করছেন।