শৈলকুপায় শিশু সুমাইয়া ধর্ষণ মামলায় এসআই ইকবাল কবিরের তেলেসমাতি তদন্ত ফাঁস

এজাহার চার্জশিট ও মানবাধিকারের তদন্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে শৈলকুপার হাকিমপুর গ্রামে শিশু সুমাইয়া ধর্ষণ মামলার চার্জসিট প্রদান করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই ইকবাল কবির আদালতে চার্জসিট প্রদান করেন। শিশু সুমাইয়া ধর্ষণ মামলায় বাদীর এজাহার, মানবাধিকার ও পুলিশের তদন্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় মামলাটির ভবিষ্যত নিয়ে হতদরিদ্র পরিবারটি শঙ্কিত। প্রশ্ন উঠেছে কার কথা ঠিক? মামলাটির রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায় মামলাটির বাদী তছির উদ্দীন ঘটনার ৬দিন পর শৈলকুপা থানায় উপস্থিত হয়ে একই গ্রামের মনোয়ার মোল্লার ছেলে শিমুলের (১৯) বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর শিমুলকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। বাদী তার এজাহারে দাবি করেছেন, আসামি শিমুলই তার নাতনিকে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে পুলিশ একই গ্রামের ভাজা বিক্রেতা ওসমান গনিকে সন্দিগ্ধ হিসেবে গ্রেফতার করে এ ধর্ষণ ঘটনার সাথে যুক্ত করে জেলহাজতে পাঠায়। আদালত থেকে গত বৃহস্পতিবার ওসমান গণি জামিন লাভ করলেও শিমুল এখনো কারাগারেই আছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইকবাল কবির চার্জসিটে উল্লেখ করেছেন, বাদী ও সাক্ষিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভিকটিমের ২২ ধারায় রেকর্ডকৃত জবানবন্দী, ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ পর্যালোচনা ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রাপ্ত তথ্যমতে গ্রেফতারকৃত আসামি ওসমান গণি বিশ্বাস সুমাইয়া ধর্ষণের সাথে জড়িত মর্মে সত্য বলে প্রতিয়মান হয়। সে কারণে মামলার এজাহার নামীয় আসামি শিমুলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দানের সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার এসআই ইকবাল কবির জানান, সামাজিক বিরোধের কারণে বাদী ও সাক্ষিগণ শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া যে স্কুলের জানালা দিয়ে শিশু সুমাইয়াকে ভেতরে ঢুকানো হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে তাতে সন্দেহ ও গরমিল পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, তদন্তকালে ভিকটিম সুমাইয়াকে ছবি দেখালে সে আসামি ওসমান গণিকে শনাক্ত করেন। ফলে ওসমান গণিই সুমাইয়াকে ধর্ষণ করে বলে তদন্তে প্রতিয়মান হয়। তিনি ঝিনাইদহ মানবাধিকার বাস্তবায়ন কমিটির তদন্ত রিপোর্ট সত্য নয় বলেও দাবি করেন। এদিকে শিশু সুমাইয়ার মামি ও মামলার ৩ নং সাক্ষি নাজমা খাতুন অভিযোগ করেন, আমরা জেনে বুঝে ও নিশ্চিত হয়েই শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। এ মামলা থেকে যদি তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়, তবে তা হবে অন্যায়। তারা পুলিশের চার্জসিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিবেন বলেও জানান। নাজমা খাতুন বলেন, আসামি শিমুলদের পরিবারের সাথে তাদের কোনো দিনই বিরোধ ছিলো না। ঘটনার দিনও তার শ্বাশুড়ি নুর জাহান বেগম শিমুলদের বাড়িতে কাজ করেছে। তাই তদন্ত কর্মকর্তা সামাজিক বিরোধ বলে যে কথা বলছে তা সত্য নয়। এদিকে ঢাকা থেকে আগত দুজন প্রতিবন্ধী ভাষা পারদর্শি ও ঝিনাইদহ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ৬জন কর্মী নিয়ে সুমাইয়া ধর্ষণ ঘটনা তদন্ত করেন। মানবাধিকার কর্মী বাবুল কুমার কু-ু, আশাফুল ইসলাম, আহম্মেদ হোসেন, গোলাম ফারুক, পাপিয়া সুলতানা ও সাইদুর রহমান পলাশ শৈলকুপার হাকিমপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। তাদের সাথে মাকসুদা আক্তার স্বর্ণ ও সালেহ আহম্মেদ শাওন নামে দুইজন ইশারাভাষী ছিলেন। মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থাটি তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, আসামি শিমুল ভালো মানুষ না। পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ। আসামির পরিবার যেহেতু টাকা দিয়ে বার বার মামলাটি মিমাংসার চেষ্টা করছে, সেহেতু ১নং আসামি শিমুলের দ্বারা এমন ঘটনা ঘটেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রতিবন্ধী শিশুটির ভাষ্যমতে এ ঘটনার সাথে আরেকজন জড়িত ছিলো। আসামি শিমুলই দ্বিতীয় ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেন বলে তদন্ত রিপোর্টে অভিমত দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কর্মী বাবুল কুমার কুণ্ডু জানান, ন্যায় বিচার ও মামলাটি প্রমাণ করে ধর্ষককে শাস্তি দেয়ার জন্য বাদীকে আইনগত সহায়তা দেয়া হবে। মামলার এজাহার, পুলিশ ও মানবাধিকারের তদন্তে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য থাকায় সুমাইয়া ধর্ষণ মামলাটি আদৌ সাফল্যের মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সর্ব মহলে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।