দামুড়হুদা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের বেহাল দশা

৪ পদের মধ্যে ৩টি পদই শূন্য ॥ ভেটেরিনারি সার্জন ছাড়াই চলছে ১০ বছর
দর্শনা অফিস: চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় অবস্থিত দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের ৪টি পদের মধ্যে ৩টি পদই রয়েছে শূন্য। টানা ১০ বছর ধরে ভেটেরিনারি সার্জন ছাড়াই চলছে সরকারি এ পশু হাসপাতালের কার্যক্রম। সুরম্য ভবন আছে, আছে এলাকায় পর্যাপ্ত গবাদিপশু, নেই শুধু সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। তাই জনগণ ছুটছে চিকিৎসার জন্য হাতুড়ে চিকিৎসকদের কাছে। যে কারণে হাতুড়ে পশু চিকিৎসকদের কদর বাড়ছে। দর্শনার ভৌগলিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ১৯৬৮ সালে তৎকালীন সরকার দর্শনা সরকারি কলেজ সংলগ্ন ১ একর জমির ওপর থানা পশু-সম্পদ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। হাসপাতালটি এক পর্যায়ে জরাজীর্ণ হয়ে পড়লে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার ফলে তত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে একটি সুরম্য ভবন নির্মাণ করা হয়। হাতের কাছে হাসপাতাল, সরকারি প্রণোদনা আর আর্থিক লাভের কথা বিবেচনা করে এক সময় এখানে বিপুল পরিমাণ গরু, ছাগল ও পোট্রি খামার গড়ে ওঠে। বর্তমান সরকার যখন দেশকে দরিদ্রমুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাগল পালন, হাঁস-মুরগির খামার ও গবাদী পশু পালনে মানুষদের আগ্রহী করে তোলা। ঠিক সেই সময়ে সরকারি প্রাণিস¤পদ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অসচেতনা ও অবহেলায় যেমন আগ্রহ হারাতে বসেছে পশু পালনকারীরা, তেমনি নষ্ট হচ্ছে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটিও। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে উপজেলার এ প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়েছে। অবাক হলেও সত্য সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির ৪টি পদের মধ্যে ৩টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালটিতে ৪টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে একজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন কম্পাউন্ডার, একজন এফইএআর (কৃত্রিম প্রজননকারী) ও একজন ড্রেসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এখানে শুধুমাত্র একজন কম্পাউন্ডার নিযুক্ত রয়েছে। এ হাসপাতালে এক সময় প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০জন বিভিন্ন সেবায় নিযুক্ত ছিলেন। যেমন কৃত্তিম প্রজনন, ছাগলের ঠা-া কাশিসহ ভ্যাক্সিন দিতে আসতে দেখা যেতো। বর্তমানে যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে কিংবা একজন ব্যক্তি এসকল কাজ করতে অনেক সময় লাগে বলে অনেকে কালক্ষেপণ না করে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি অনুধাবন করে উপজেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর থেকে প্রেষণে আমিরুল ইসলাম নামের একজন ড্রেসার এনে কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান এখানকার ভেটেরিনারি সার্জনের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এমনিতেই উপজেলা সদর থেকে দর্শনার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার, তারপরও তাকে কখনও ট্যাগ অফিসার, পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বসহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করতে হওয়ায় তিনি সপ্তাহে ২দিন আসলেও সেবা প্রত্যাশীদের সাথে দেখা হয় খুবই কম। আর সরকারি সেবার এ দৈন্যদশার সুযোগে এখানে গড়ে উঠেছে পশু ডাক্তারের নামে হাতুড়ে ডাক্তারের ছড়াছড়ি। এদের হাতে গলাকাটা সেবার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এককালে এ হাসপাতালে সপ্তাহে একদিন বিনামূল্যে হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন প্রদান করা হতো। সে সময় দর্শনা ও পার্শ¦বর্তী এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগির পালন হতো। বর্তমানে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। কারণ বর্তমানে বাজারে হাজারের নিচে ২০-২৫টি হাঁস-মুরগির জন্য কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না। আর সাধারণ মানুষের পক্ষে এত দামের ভ্যাকসিনও কেনা সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান জানান, আমি প্রত্যেক মাসিক সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করি এবং লিখিত আবেদন করেছি একাধিকবার, কিন্তু কোনো সুফল হয়নি। কর্মকর্তারা বলেন লোক নেই কোথা থেকে দেবো, যেভাবে চলে সেভাবে চালাতে হবে। এ ব্যাপারে যশোরে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কল্যাণ কুমার ফৌজদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জনের পদটি মূলত এটি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের পদ। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ বিভাগে এ পদ এত বেশি খালি রয়েছে যে, জনবল সংকটের কারণে যশোরের ২টি উপজেলাতে বর্তমানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পদায়ন করা যাচ্ছে না। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করবো। দর্শনায় অবস্থিত দামুড়হুদা পশু হাসপাতালের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।