চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের প্রসাধনি সামগ্রীর দোকানগুলোতে হরেক নামের ক্রিম বিক্রির হিড়িক : সচেতনাতায় ঘাটতি
কামরুজ্জামান বেল্টু/তৌহিদ তুহিন: রং ফর্সা করা ক্রিমে ফর্সা করে না, ত্বকের সর্বনাশ ডেকে আনে। অথচ তরুণীদের মধ্যে মুখের রং ফর্সা করার অঘোষিত প্রতিযোগিতায় মেতে মুখে মেসতাসহ জালাপোড়ায় আক্রান্ত হয়ে তাদের অনেকেরই ছুটতে হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে। এদের অনেকেই বলেছেন, তারা প্রসাধনী সামগ্রীর চটকদারি প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে এবং একজন আর একজনকে দেখে ওই রং ফর্সা করা হরেক নামের হরেক রকম ক্রিম মেখে ত্বকের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে। তাছাড়া কিছু বিউটি পার্লার থেকেও রং ফর্সা করা ক্রিম বিক্রিসহ তা মাখার পরামর্শের কারণেও সমাজে এসব ক্রিম ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের প্রায় সবকটি প্রসাধনীর দোকানেই রং ফর্সা করা হরেক নামের দেশি বিদেশি ক্রিম পাওয়া যায়। উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে মধ্যবসায়ী নারীদের মধ্যে এ ক্রিম ব্যবহারের হিড়িক পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এসব ক্রিম চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্য এলাকাতেও এ ক্রিম ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি প্রসাধনীর দোকনে রং ফর্সা করা ক্রিম কিনতে গেলে দোকানিরা বের করে দেন চড়া মূল্যের ফেয়ার লুক নামের ক্রিম থেকে শুরু করে মর্ডান রুপসী রানী, গোরি, ডিউ, পিজা, সানডাল, ঐতুবৃ, বিবিসহ বহু নামের বহু ধরনের রং ফর্সা ক্রিম। যার মধ্যে কিছু রয়েছে ভারতীয়, কিছু রয়েছে পাকিস্তানি। অধিকাংশই দেশি। দেশি বিদেশি এসব ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের কতোটা ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে বিক্রেতাদের তেমন ধারণাই নেই। তাদের দাবি, ক্রেতারা যেমনটি চায়, তেমনটিই আমদানি করে তা বিক্রি করা হয়। কোনটিতে কতোটা ক্ষতি তা বুঝবো কিভাবে? তবে বড় বড় প্রসাধনী বিক্রেতাদের কয়েকজন কোনোরকম রাগঢাক ছাড়াই বলেছেন, এবার শীতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি টাকার রং ফর্সা করা প্রসাধনী বিক্রি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চিহ্নিত কিছু দোকানে ভারতীয় প্রসাধনী বেশি বিক্রি হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর, শহরতলি ও গ্রাম বাংলার অসংখ্য নারীর মুখের ত্বকই এখন বিবর্ণ। ফর্সা হওয়ার জন্য মাখা প্রসাধনীই এ জন্য দায়ী। ত্বকের স্বাভাবিক রং ঝলসে বা ত্বকের ওপরের অংশ পুড়ে উদরে কিছুদিনের জন্য ত্বক উজ্জ্বল বা ফর্সা দেখালেও পরিণতি যে ভয়াবহ তা না বুঝেই নারীদের মধ্যে এসব প্রসাধনী ব্যবহারের হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে শীতের শুরুতে রং ফর্সা করা ক্রিমের বিক্রি বেড়েছে বহুগুণ। ক্রেতাদের মধ্যে তরুণীই বেশি। রং ফর্সা করা ক্রিমে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকার কারণে সামান্য রোদে গেলেই শুধু জ্বালাপোড়া করে না, ত্বকে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও বাসা বাঁধে। মুখের ত্বকে মসৃণভাব কেটে বড় বড় ব্রনসহ গদগদে দাগে ভরে ওঠে। এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আফছার উদ্দীন বলেছেন, ত্বকের যত্মের জন্য শুধুমাত্র সহনীয় মাত্রার খারের সাবানই যথেষ্ট। শীতে যাদের ত্বকে শুষ্কভাব বেশি তাদের অলিভওয়েল ও গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া যেকোনো প্রসাধনীই নিয়মিত তিন মাসের অধিক ব্যবহার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। আর রং ফর্সা করা ক্রিম? সেটা তো আরও মারাত্মক। এ থেকে উঠতি বয়সী মেয়েদের ফেরাতে হবে। তা না হলে চর্মরোগই শুধু নয়, চোখেরও স্থায়ী সমস্যা দেখা দেবে।
স্বাস্থ্য ও সমাজ সচেতন অনেকেই উঠতি বয়সী মেয়েদের রং ফর্সা করা ক্রিম ব্যবহারে ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে বলেছেন, এ বিষয়ে অভিভাবকদের বেশি বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বালিকা বিদ্যালয়ে বিশেষ জ্ঞানদানের আয়োজন করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া দরকার। এছাড়াও ক্ষতিকর প্রসাধনী বাজারে বিক্রি বন্ধে দরকার দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিশেষ নজরদারি। যদিও আমাদের দেশের বাস্তবতায় তা অলিক স্বপ্ন।