বিশ্বাস আরও প্রগাঢ় হয় যখন, বিশ্বাসের সমর্থনে সামান্য কিছু সামনে উঠে আসে তখন। আর অন্ধবিশ্বাস? ওতে আকাশের চাঁদেও আন্দাজে কারো মুখোচ্ছবি ভেসে ওঠে, বাতাসেও ভেসে আসে গায়েবি আওয়াজ। কোনো কিছুর কুকানিতেও যে কেউ কেউ জপের আওয়াজ খুঁজে পান। কুকুরছানার শ্বাস প্রশ্বাসে শব্দ হলেও তা কারো কারো কানে পছন্দের জিগির বলে মনে হতেই পারে। তা নিয়ে স্বভাবগত হুঁজুকেমাতা বাঙালি যদি মেতে ওঠেই তাকে কি বাড়াবাড়ি বলা চলে? তা না বললেও সুযোগ বুঝে যখন কেউ প্রতারণার দোকান খোলার মতলব আঁটে তখন সমাজের সচেতন মানুষগুলোকে একটু ঘুরে দাঁড়াতেই হয়। না হলে প্রত্যাশিত পথ মসৃণ হবে কীভাবে?
শুধু চুয়াডাঙ্গায় নয়, কয়েক বছর আগে খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একবাড়ির ছাগলঘরে জন্ম নেয়া ৪ কুকুরছানার মধ্যে একটির কুকানো নিয়ে কৌতূহল দানা বাঁধে। উৎসুক জনতার ভিড় জমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ভাইরাল হয়। পরে যখন পরিলক্ষিত হয় ৪ ছানার মধ্যে সবচেয়ে কাবু ছানা দুর্বলতার কারণেই শ্বাসকষ্টে ভুগছে, আর সে কারণেই প্রতিবার নিশ্বাসে ওরকম শব্দ হচ্ছে তখন ভুল ভাঙে হুজুকেমাতা সকলের। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জুড়ানপুরের কলাবাড়ি হঠাৎপাড়ায় জন্ম নেয়া কুকুরছানা নিয়ে প্রায় একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। অবশ্য খুলনার মতো অতোটা মাতামাতি এখনও পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। তবে শুরুর ধরণ দেশে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। একসময় রেলগাড়ির শব্দও ‘ঢাকায় যাবো খাসি খাবো’সহ যে যা বানাতো তাই মনে হতো। এখন সেই বিশ্বাসে ছেদ পড়েছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ঠুনকো হলেই কেবল তুচ্ছ কিছু নিয়ে মাতামাতি মানায়। তা না হলে কুকুরছানার কুকানি নিয়ে মাতামাতি কেন? অবশ্যই জ্ঞানের গভীরতায় ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতিকেই পুঁজি করে একশ্রেণির মতলববাজ প্রতারণার দোকান খোলার পাঁয়তারা শুরু করে। যে সমাজ যতো সচেতন সেই সমাজে প্রতারণার দোকান ততোটাই কম। কাকতালীয় কোনো কিছু নিয়ে মাতামাতির আগে ঘটনার উৎস জানা বা জানার চেষ্টাই সচেতনার লক্ষণ। আর তা না বুঝে, উৎস না খুঁজে হুজুকে মেতে ওঠা সাধারণ মানুষকে উস্কে দেয়া অন্ধত্বই নয়, সচেতন সেজে সমাজের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতারই সামিল। সমাজের স্বার্থেই সমাজের সচেতন সকলকে সর্বক্ষেত্রেই সজাগ হওয়া দরকার।