কতোটা বেপরোয়া না হলে টহল পুলিশ অফিসারের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারতে পারে? অতোটা দুঃসাহস তার মধ্যে এলো কীভাবে? এসব প্রশ্ন যেমন দানা বেঁধেছে সাধারণ মানুষের মনে, তেমনই কারো কারো অন্যরকম সন্দেহও অমূলক নয়। সন্দেহপ্রবণদের প্রশ্ন- একাধিক মামলার আসামি, রেলওয়ের কোয়ার্টার জবর দখল করে বসবাসের পাশাাশি মাদকের আখড়া বসানো মিন্টু কি নেশারঘোরে প্রতিপক্ষ ভেবে পুলিশের ঘাড়ে কোপ মেরে বসলো? জবাব যাই হোক, মিন্টু ও তার প্রতিপক্ষ গ্যাঙের ক্ষমতার উৎস শনাক্ত করে তা উৎপাটন করতে না পারলে এর চেয়ে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে বাধ্য।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি ও জমির ওপর থাকা কোয়ার্টারগুলোর অধিকাংশই বিধিসম্মতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ অভিযোগ পুরোনো হলেও ঘুরে ফিরেই জমি ও কোয়ার্টার নিয়ে নতুন নতুন অপ্রীতিকর ঘটনার উৎপত্তি হয়। স্টেশনের আশে পাশে একাধিক গ্যাং রয়েছে, যাদের অর্থের মূল উৎস মাদক। বিভিন্ন প্রকারের নেশাদ্রব্য বিক্রি, পাচার ও মাদকের আখড়া বসিয়ে ওইসব গ্যাঙের সদস্যরা নেশার জোগান পায়। আর রাজনৈতিক দলের মিছিল মিটিঙে দলবদ্ধ হয়ে ওরা হাজির হয়ে পাতি নেতার কৃপা নিয়ে নিজেদের ক্ষমতাবান ভেবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কখনো কখনো ওদের কারো কারো পুলিশের কোনো কোনো অফিসারের সাথে বিশেষ ঘনিষ্ঠ হওয়ার দৃশ্যও মহল্লাবাসীর কাছে চেনা ছবি হয়ে দাঁড়ায়। ওই ঘনিষ্ঠতার বদৌলতে ওই ব্যক্তির হাতে মহল্লার যে বা যারাই মাদকের সাথে জড়িত তাদেরকে বিশেষ হারে উৎকোচ দিতে হয়। এ নিয়েও বিরোধের সূত্রপাত ঘটনার উদাহরণ বিগতদিনে রয়েছে। নতুন করে সৃষ্ট বিরোধের মধ্যেও সেই আধিপত্য বিস্তারের কুপ্রভাব স্পষ্ট। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের অদূরবর্তী ফার্মপাড়া, হকপাড়া ও দক্ষিণ গোরস্থানপাড়ার উত্তেজনা এবং সংর্ঘষের সূত্রপাত অনুসন্ধানে মাদকের সংশ্লিষ্টতা যেনো থাকেই। গত কয়েকদিন ধরে পরপর হামলা, পাল্টা হামলার পর পরশু সোমবার সন্ধ্যার পর শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ওহিদুল ইসলামের ঘাড়ে কোপ মারার ঘটনার সাথেও মাদক ও নারীর সংশ্লিষ্টতার গন্ধ রয়েছে। যে বা যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের এবং যাদের কারণে উত্তেজনার পরদ চড়েছে তরতরিয়ে তাদের অবশ্যই অপরাধের মাত্রা বুঝে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
অবশ্যই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একদিনে বেপরোয়া হয় না। বেপরোয়ার হওয়া তথা পেশিশক্তি প্রয়োগের মতো হিং¯্রতর বহির্প্রকাশের জন্য কিছুটা হলেও দরকার হয় ক্ষমতাবানদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি। এতে একপক্ষ যখন আধিপত্য বিস্তারে মেতে ওঠে, তখনই প্রতিপক্ষও দাঁড়িয়ে যায়। শুরু হয় হিংসার লড়াই, ছড়ায় অশান্তি। কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের আশেপাশে যে অশান্তি আবহাওয়া বিরাজ করছে তা দীর্ঘদিন ধরে লালিত দুটি পক্ষের অধিপত্যেরই কুপ্রভাব। এতে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষগুলোকে শুধু শঙ্কিতই নয়, ওদের ছড়ানো বিষবাষ্পে প্রতিনিয়তই গুণতে হচ্ছে অনিশ্চয়তার প্রহর। স্বস্তি চায়, শান্তি চায় এলাকাবাসী।