ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে জাগিয়ে তোলার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টে (সেকায়েপ) নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের ভালো করার উদ্যোগ চরমভাবে ব্যাহত হতে চলেছে। ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার প্রায় ৪৮টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ প্রকল্প চালু থাকলেও নিয়োগকৃত শিক্ষকরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যাচ্ছেন না। এমনকি তারা চুক্তি ভঙ্গ করে হোম ভিজিট, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ফরমেট অনুযায়ী তালিকা না করা, পাঠটীকা প্রস্তুত ও ধারাবাহিক মূল্যায়ণসহ বাধ্যতামূলক শর্তগুলো পূরণ করছেন না। এ প্রকল্পে স্কুল সভাপতি হচ্ছে প্রথম পক্ষ ও শিক্ষকরা হচ্ছেন দ্বিতীয় পক্ষ। দ্বিতীয় পক্ষ যদি ১৩টি শর্তের যে কোনো একটি অমান্য করেন তবে প্রথম পক্ষ ৩০ দিনের লিখিত নোটিশ দিয়ে চুক্তি বাতিল করার অধিকার সংরক্ষণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলগুলোর সভাপতিরা এ বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। ফলে সেকায়েপ প্রকল্পের শিক্ষকরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ক্লাস নিচ্ছেন ও প্রতি মাসে তারা বিশ্ব ব্যাংকের দেয়া বেতন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে বিসিএস প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা বিদেশে ঘোরা আর ঢাকায় ভালো পদায়নের একটা মাধ্যম হিসেবে সেকায়েপ প্রকল্পটি ব্যবহার করে থাকেন। তারা বছরের পর বছর এ প্রকল্পে চাকরিও করছেন। এ প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্ট হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষক বা অঈঞ শিক্ষক। যেসব স্কুলে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দুর্বল শিক্ষার্থী আছে, সেসব স্কুল এ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।
ঝিনাইদহের মহেশপুর ও হরিণাকু-ু উপজেলায় সেকায়েপ প্রকল্পটি চালু থাকলেও এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ ব্যাহত হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে অতিরিক্ত ক্লাস শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা দূর করে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করার দাবি জানিয়ে আসলেও বাস্তবে এ প্রকল্পের অতিরিক্ত ক্লাসের সুফল পাওয়ার গবেষণা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। মুখে মুখে দাবি করা হয় সফলতা। জানা গেছে, রেজাল্ট অনুযায়ী তাদের বেতন দেয়া হয় ১৮ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে অতিরিক্ত ১৬টি ক্লাস (স্কুল সময়ের আগে বা পরে) নিলে আরও অতিরিক্ত ৮ হাজারসহ সর্বমোট ২৫-২৬ হাজার টাকা বেতন পান যা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকের চেয়ে বেশী। স্কুল সময়ের আগে বা পরে প্রতি মাসে ১৬টি ক্লাস নিতে হয়, যার একটি ক্লাস না নিলেই বরাদ্দকৃত ৮ হাজার টাকা পাবেন না। কিন্তু তারা ক্লাস না নিয়েই উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে জোগসাজস করে টাকা তুলে নিচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে প্রতি মাসে সেকায়েপ প্রকল্পে নিযুক্ত শিক্ষকরা বেশী বেশী ছুটি ভোগ করেন। ছুটি না দিলে অনুপস্থিত থাকেন। অনুপস্থিত থাকলে তাদের বেতন কাটা যায় না, বিধায় তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশী। হরিণাকু-ু উপজেলার কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কোনো স্কুলেই তারা হোম ভিজিট, পোর্টফোলিও ও পাঠটীকা প্রস্তুত করেন না। গত রমজান মাসে ছুটি ছিলো, কিন্তু তারা আগের মাসে ক্লাস নিয়ে ছুটির মাসে ক্লাস নেননি। অথচ ওই মাসের অতিরিক্ত ক্লাসের বিল তুলেছেন। অথচ অতিরিক্ত ক্লাস না নিলে ওই ক্লাসের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ হাজার টাকা পাবেন না মর্মে শর্ত আছে।
অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনুপস্থিতিতে একজন অপরজনের ক্লাস নিতে চান না। সরাসরি না করে দেন। তাদেরকে কিছু বলা যায় না, বললেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ফোনে জানান এবং শিক্ষা অফিসার ঘটনা না জেনেই শিক্ষকদের পক্ষ নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকু-ুর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, সেকায়েপ প্রকল্পে নিযুক্ত শিক্ষকরা বেশ ভালোই ক্লাস নেন, তবে তারা হোম ভিজিট করেন না। ওই স্কুলে নিয়োগকৃত মনোয়ার হোসেন, শিহাব উদ্দীন ও জেসমিন নাহারও স্বীকার করেন তারা কোনো শিক্ষার্থীর বাড়ি যান না। স্কুল সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, তিনি সেকায়েপ প্রকল্পের শর্ত সম্পর্কে অবগত নন। হরিণাকু-ুর শাখারীদহ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, তার স্কুলে নিয়োগকৃত শিক্ষকরা ভালো তবে শর্ত মোতাবেক হোম ভিজিট বা পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ফরমেট অনুযায়ী তালিকা, পাঠটীকা প্রস্তুত ও ধারাবাহিক মূল্যায়ণসহ বাধ্যতামূলক শর্তগুলো পূরণ করেন না। স্কুলের সভাপতি শেফালী খাতুন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। অভিযোগ উঠেছে হরিণাকু-ুর যে স্কুলগুলোতে সেকায়েপ প্রকল্পের শিক্ষক নিয়োগ আছে তারা পুরোপুরিভাবে শর্তপূরণ করছেন না। এ বিষয়ে হরিণাকু-ু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুল হক জানান, তিনি এ উপজেলায় নতুন এসেছেন। তাই না জেনে কিছুই বলতে পারবেন না।