পুরস্কারের প্রত্যাশা বা লোভে উৎকর্ষতা মেলে ধরার প্রয়াস যতোটা না ফলদায়ক, তার চেয়ে ঢেরবেশি ফলদায়ক ত্যাগের মানসিকতা গড়ে তোলা। পাওয়ার আশা ছেড়ে প্রতিভা বিকাশের সর্বাত্মক চেষ্টা শুধু সাফল্যের শীর্ষেই পৌঁছে দেয় না, জনমটাও স্বার্থক করে তোলে। বিশ্বনন্দিত থেকে বাড়ির বারান্দায় নিন্দিতদের কর্মপর্যালোচনা করলে এরই প্রমাণ মেলে। যারা নেয়ার তালে তাদের চেয়ে যারা দেয়ার তালে থাকে তাদেরই মানুষ মূল্যায়ন করে, মনে রাখে। সঙ্গত প্রশ্ন, কারা দিতে পারে? যারা তাদের মহানুভাবতায় ত্যাগের মহিমায় মহত্ত্বতার তৃপ্তিটুকুও পাওয়ার প্রত্যাশা করে না, অথচ তিনিও মানুষ।
এটা চরম সত্য যে জগতে অর্জন অতোটা সহজ নয়। যে কিছুই অর্জন করতে পারে না, সেও সমাজকে কিছু না পারলেও নিজেকে দিতে পারে। অথচ যারা অর্জন করে তাদের সকলেই সবকিছু দিতে পারে না? চর্চায় জ্ঞানী হয়ে, পরিকল্পিত পরিশ্রমে ধনি হয়েও দিতে পারে না বলেই সমাজের শীর্ষে উঠেও মহাকালের পথে তাদের অধিকাংশেরই ন্যূনতম পদচিহ্ন থাকে না। তারাই অর্জন করে, যারা লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথকেই পাখির চোঁখ করে। আর যারা লক্ষ্যভেদের বদলে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে তাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্বাভাবিক। যদিও সিংহভাগের ক্ষেত্রে বিষয়টি না বুঝেই মাঝপথে হোঁচটখাওয়ার অভিজ্ঞতাই জীবনের পড়ন্ত বেলায় জাবর কাটার স্মৃতি হয়ে দাঁড়ায়। এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, নিজেকে বিকশিত করার উত্তম পন্থাই হলো, প্রতিমুহূর্তে নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতায় নিজেকে টপকানোর প্রচেষ্টা। এতে আবার আত্মকেন্দ্রিক হলে চলে না। বৃত্তের মধ্যে উৎকর্ষতায় উজ্জ্বল হলেও বাইরে কতোটা যোগ্য তার গুণগত মান যাচাইয়ের বদলে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি বোকামি। স্বীকৃতি তথা পুরস্কারের প্রত্যাশায় মত্তদের জন্য তিরস্কারই অপেক্ষা করে। যদিও নিজের চরিত্র গঠনে নিজে সচেতন না হলে উম্মাদ উপাধিও জুটতে পারে।
নিজেরটা বোঝে না এমন মানুষ যেমন বিরল, তেমনই মহাকালের পথে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলোছাড়ানো মহামানবও কি হাতেগোনা নয়? যুগে যুগে তারাই সময়ের ¯্রােতে টিকেছে, যারা পাওয়ার আশা ছেড়ে নিজেকে সমাজকেই শুধু দেয়ার চেষ্টায় মেতেছে। যদিও ধরিত্রীর বুকে সকলে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বলেই জগৎটাই মায়াবী উপাধি পেয়েছে। এটুকু স্বীকৃতি পেতেও জগৎকে কি প্রতিনিয়তই মানুষের জন্য জেগে থাকতে হচ্ছে না? জগৎও যদি ওই স্বীকৃতির জন্য জাগতো? আর যায় হোক মায়াবী হতো না। প্রকৃতির উদারতা দেখেও মানুষ যে কেন শেখে না! অথচ মানুষ-ই সৃষ্টির সেরা জীব।