তফসিল ঘোষনা পর দ্বিতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণ স্থগিত

kr

দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে ওয়ার্ড পুনঃগঠনের গেজেট প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার: আবারও স্থগিত হলো দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ। ইউনিয়নে ওয়ার্ড পুনঃগঠনের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় স্থগিত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামি ২৮ ডিসেম্বর এ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিলো। এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর দ্বিতীয় বারের মতো ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হলো।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মোট ভোটার ১৮ হাজার ৫৪৬ জন। পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৩০৩ ও নারী ভোটার ৯ হাজার ২৪৩ জন। ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী এসএম জাকারিয়া আলম (নৌকা), বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আশরাফুল হক বিপ্লব (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী (জামাত নেতা) আবু বকর সিদ্দিক (চশমা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) আক্তারুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামেন। ৩ সংরক্ষিত নারী আসনে ৮জন ও ৯ সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৫ প্রার্থী নির্বাচনে মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার গুঞ্জন উঠলে কয়েকদিন আগে থেকেই প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারনায় অনেকটা ভাটা পড়ে প্রার্থীদের মধ্যে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন পারকৃষ্ণপুর-মদনা। এ ইউনিয়নে সর্বশেষ ভোটগ্রহণ হয়েছে ২০১১ সালের ১২ জুন। মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। সে মোতাবেক ২৮ মে ভোটগ্রহণের কথা ছিলো। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ইউনয়নের ২নং ওয়ার্ডের বিভাজনের আবেদন জানান জিরাট গ্রামের আব্দার আলী ছেলে কাঠমিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম বাদল। তার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগ ১৬ মে ৩ মাসের জন্য নির্বাচন তফসিল স্থগিত করেন। থেমে যায় সকল প্রচার-প্রচারণা। পরবর্তীতে আপিল বিভাগ ১৭ জুলাই ভোটগ্রহণের স্থগিত আদেশ স্থগিত করে ভোটগ্রহণের আইনগত কোনো বাধা নেই বলে আদেশ দেন। গত ১২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয়বারের মতো ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেন। আবারও নতুন করে চলতে থাকে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। এর আগে গত ১৭ জুলাই দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ওয়ার্ডসমূহের সীমানা নির্ধারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ২৩ নভেম্বর গেজেট প্রকাশিত হয়। জিরাট গ্রামের মৃত মহর ম-লের ছেলে আক্কাচ আলী ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনঃগঠনের প্রজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় সাবেক ওয়ার্ড অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন বন্ধ করার আবেদন করেন। আবেদন পাওয়ার পর দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি পত্র দেন। পত্রে উল্লেখ করা হয়, দামুড়হুদার উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বিতর্কিত ওয়ার্ডসমূহের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে আবেদন করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ ইউনিয়নে বিতর্কিত ওয়ার্ডসমূহের সীমানা নির্ধারণের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। সীমানা নির্ধারণের কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের ২৮ মে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন স্থগিত চেয়ে জনৈক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ রিট মামলায় হাইকোর্ট ৩ মাসের জন্য নির্বাচনী তফসিল স্থগিত করেন। গত ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য ইউনিয়নের বিতর্কিত ওয়ার্ডসমূহ পুনঃগঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় স্থানীয় সরকার বিভাগে আবেদন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ থেকে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইউনিয়নের বিতর্কিত ওয়ার্ডসমূহ পুনঃগঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে পুনরায় সীমানা নির্ধারণ করার জন্য কর্মকতা নিয়োগ করা হয়। গত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং গেজেট প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে পাঠানো হয়। গেজেট প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই গত ১২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেট প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের পর জিরাট গ্রামের মৃত মহর ম-লের ছেলে আক্কাচ আলী ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনঃগঠনের প্রজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় সাবেক ওয়ার্ড অনুযায়ী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন বন্ধ করার আবেদন করেন। অপরদিকে, পূর্বের ওয়ার্ডের অস্তিত্ব না থাকায় পুনঃগঠিত ওয়ার্ড বিভাজন মোতাবেক ভোটার তালিকা পুনঃবিন্যাস করারও প্রয়োজন।
পক্ষান্তরে, ২৯ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি আবেদন উল্লেখ করেন, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ওয়ার্ড সীমানা পুনঃগঠনের গেজেট গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিস পূর্বের সীমানা ও ভোটার দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। সে কারণে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আইনগত জটিলতা হতে পারে। এ নির্বাচনে আইনগত জটিলতা এড়ানোর জন্য প্রত্যয়ে আগামি ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান স্থগিত করে নতুন গেজেট অনুযায়ী ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করে পরবর্তী তারিখে নির্বাচন দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
গত ৩০ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিক পত্রে জানানো হয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের বিতর্কিত ওয়ার্ডসমূহের পুনঃগঠন কার্যক্রম সম্পন্ন করে গত ১৭ জুলাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়ার্ড পুনঃগঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। সে মোতাবেক গত ২৩ নভম্বের চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ওয়ার্ড পুনঃগঠনের প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা প্রয়োজন। ওয়ার্ড পুনঃগঠনের পূর্বের ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন সমীচীন হবে না। নির্বাচন কমিশন এ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছেন। এ সময়ের মধ্যে পুনঃগঠিত ওয়ার্ডের ভোটার হালনাগাদ তালিকা করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সে মোতাবেক দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের পুনঃগঠিত ওয়ার্ডসমূহের ভোটার হালনাগাদ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, ওয়ার্ড পুনঃগঠনের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় সীমানা জটিলতা ও ভোটার তালিকা পূর্নবিন্যাসের জন্য পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করেছেন কমিশন। পুনঃগঠিত ওয়ার্ডসমূহের ভোটার হালনাগাদ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান এ বিষয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চাওয়া হয় হাউলী ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত প্রসঙ্গে। পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিতের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি ওয়ার্ড বিভাজনে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। পরবর্তীতে গত ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় এবং গেজেট প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ সরকারি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে পাঠানো হয়। সেই প্রজ্ঞাপনটি গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। সে মোতাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ভোটগ্রহণের স্থগিত আদেশ পাওয়া গেছে।