বদরগঞ্জ প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা সদরের হাসানহাটি গ্রামের এক স্কুলছাত্রীর ঘরের জানালা দিয়ে বই নেয়া কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিসকারীরা রাকিব হাসান নামের এক ছাত্রকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এ জরিমানার টাকা সাতদিনের মধ্যে স্কুলছাত্রীর পরিবারের কাছে দেয়ার জন্য সালিসকারীরা তাগিদ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনাটি কেন্দ্র করে হাসানহাটি গ্রামে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের হাসানহাটি মাঝেরপাড়ার খলিলুর রহমানের ছেলে রাকিব হাসান ও লিটন আলির মেয়ে লিলি খাতুন আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে রাকিব হাসানের কাছ থেকে গত কয়েকদিন আগে একই পাড়ার লিলি খাতুন একটি বই নেয়। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে রাকিব তার বইটি ফেরত নেয়ার জন্য লিলি খাতুনের বাড়িতে যায়। যে ঘরে লিলি থাকে সেই ঘরের জানালার কাছে গিয়ে রাকিব তার বইটি ফেরত নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বইটি ফেরত না দিয়ে রাকিবকে তার ঘরের ভেতর আসতে বলে লিলি। ঘরের মধ্যে রাকিব ও লিলি এক সঙ্গে থাকা কেন্দ্র করে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে প্রেমজ সম্পর্কের কাহিনী। এ জুটি কেন্দ্র করে দুইদিন ধরে গ্রামে সালিস বৈঠক বসলেও এর কোনো সমাধান দিতে পারেনি সালিসকারীরা। গত রোববার রাতে আবারও এ যুগল জুটি কেন্দ্র করে হাসানহাটি গ্রামে বসানো হয় সালিস। সালিসে রাকিবের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর সাথে প্রেম সখ্যতার কোনো প্রমাণ না থাকলেও ওই ছাত্রীর ঘর থেকে বই নিয়ে জানালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগ কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিসে অভিযুক্ত করা হয় রাকিব হাসানকে এবং ৬০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা সাতদিনের মধ্যে স্কুলছাত্রীর পরিবারের কাছে দেয়ার জন্য সময় বেধে দিয়েছে গ্রাম্য সালিসকারীরা বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে স্কুলছাত্রীর নানী বলেন, আমার নাতির সাথে রাকিব হাসানের সাথে কোনো প্রেম সম্পর্ক নেই। পড়া বই নেয়া কেন্দ্র করে গ্রামের কিছু অসাধু মহল মিথ্যা অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। রাকিবের দাদা নুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেছেন, লিলির পরিবার রাকিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সালিস করে এ জরিমানা করেছে। এ বিষয়ে স্কুলছাত্রী লিলির বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়া গেলেও প্রবাসী থাকা হাসানহাটির সাব্দার হকের ছেলে রেজাউল হক সংবাদকর্মীকে গালাগালি করে ও হুমকি দেয়। তিনি বলেন স্কুলছাত্রীর মানসম্মান নিয়ে রাকিব টানাটানি করবে আর আমরা তাকে ছেড়ে দেবো।
অন্যদিকে রাকিব হাসানের মামা সাদেক মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, রাকিব হাসানের সাথে স্কুলছাত্রীর প্রেম সখ্যতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে জোরপূর্বক জরিমানা করা হয়েছে। স্কুলছাত্রীর সাথে রাকিব হাসানের প্রেম সখ্যতা নেই এবং গ্রামের কেউ তাদেরকে হাতেনাতে আটক করেনি, তাহলে আপনারা জরিমানা দেবেন কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা জরিমানার টাকা যদি সাতদিনের মধ্যে না দেই তবে মেয়ের লোকজনেরা জোরপূর্বকভাবে আমাদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করে নেবে।
হাসানহাটি গ্রামের সমাজসেবক আব্দুল আজিজ বলেন, সুশাসন ব্যবস্থা রাখার কারণে রাকিবকে জরিমানা করা হয়েছে।