স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের আগে আকস্মিকভাবে আশপাশের জেলাগুলো থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষকে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, তাদের সমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাস চলতে দেয়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এভাবে বাধা দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পুলিশও এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পরিবহন শ্রমিকদের দায়ী করেছে। পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, মালিকরা বাস বন্ধ রাখতে বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী ও বাস মালিক সমিতির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, বিএনপির কর্মসূচিতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয় থেকে অনেক মালিক বাস নামাননি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার দুপুর ২টায় বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়, যাতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। এই জনসভায় ঢাকা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশাপাশি সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের যোগ দেয়ার কথা ছিলো। ঢাকা নগরীর ভেতরে সকালে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাস চলাচল কমে যায়। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘বিএনপির লোকজন’ কিছু বাস নিয়ে গেছে। আবার তাদের বাস দেয়া এড়াতে অনেক মালিক গাড়ি নামাননি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এবং চিটাগাং রোড এলাকায় শত শত মানুষকে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়। দূরপাল্লার বাস চললেও তাতে নিকটগামী কোনো যাত্রী নেয়া হচ্ছিল না। এই দুর্ভোগে পড়ে ছয় মাস বয়সী নাতনিকে নিয়ে মানিকনগরের একটি হাসপাতালে হেঁটেই রওনা হতে দেখা যায় রায়েরবাগের মরিয়মকে। শনির আখড়া এলাকায় তিনি বলেন, ‘মাঝে-মইদ্যে একটা গাড়ি আহে। কিন্তু আমাগোরে লয় না।’ শনির আখড়ার বাসিন্দা ফাহিম জানান, গুলিস্তান যাওয়ার জন্য দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। বাস পাচ্ছেন না। নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে গুলিস্তানের আশিয়ান, গেণ্ডারি এবং কলাবাগান রুটের মেঘলা পরিবহনের বাস সকাল থেকেই বন্ধ ছিলো। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসের কাউন্টার ছিলো তালাবদ্ধ। সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করে রাখা হয়েছে। বাসের জন্য কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অনেক যাত্রীকে ভ্যানে চেপে গন্তব্যে রওনা হতে দেখা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীবাহী যান চলাচল অনেক কম ছিলো। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
ঢাকাগামী যাত্রী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, বিএনপির সমাবেশে যাতে কেউ অংশ নিতে না পারে সে কারণে সরকারি দলের লোকজনের ইশারায় বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। মিরপুরগামী যাত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, বাস কাউন্টারগুলো তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও যাত্রীবাহী বাস মিলছে না।
জেলা বিএনপি সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, তাদের সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে সরকারের উপর মহলের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশির নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ বাস-মিনিবাস পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, সকাল থেকে নিয়মিত বাস চলাচল করছিল। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ থেকে বাস রাজধানীর গুলিস্তানে যাওয়ার সময় কিছু যাত্রী জোর করে বাসগুলোকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। অনেক বাস ঢাকায় গিয়ে দীর্ঘক্ষণেও ফিরে আসেনি। যে কারণে নিরাপত্তার দিক ভেবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভোর থেকে ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহন সংকট ছিলো। এতে পোশাক শ্রমিকসহ সাধারণ যাত্রীরা পড়ে দুর্ভোগে। কেউ হেঁটে, কেউ বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে রওনা হয়। ঢাকা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবুল হোসেন বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে পরিবহন সংকট দেখা গেছে। বাসে করে বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যাচ্ছে এমন অভিযোগে পুলিশ মহাসড়কের আমিনবাজার, আশুলিয়া বাজার এলাকায় ঢাকামুখী পয়েন্টে যানবাহনে তল্লাশিও করে পুলিশ। ডিইপিজেড পোশাক কারখানার কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হেল বাকী বলেন, সকালে বাস না পেয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে অটোরিকশা, ভ্যানগাড়ি এবং হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে। সালমা আক্তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মিরপুরে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার জন্য সাভার বাজার বাসস্টান্ডে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তবে গণপরিবহন না পেয়ে অবশেষে সাভারের কাতলাপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে যান। রিকশাচালক সালাম মিয়া বলেন, অটোরিকশা মহাসড়কে উঠলেই পুলিশ আটক করতো। আর আজ মহাসড়কে অটোরিকশা চালাচ্ছি। আয়ও হচ্ছে ভালো। লৌহজং থানার ওসি আনিচুর রহমান বলেন, ‘আমি বাস বন্ধ করে দেয়ার কথা শুনেছি। কী কারণে বন্ধ রয়েছে তা আমার জানা নেই।’