আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা পৌর শহরের নতুন করে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। শহরের অন্তত ১৫ পয়েন্টে বখাটেদের উৎপাতে স্কুল ও কলেজপড়ুয়া মেয়েরা অতিষ্ঠ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দলবেঁধে অথবা মোটরসাইকেলে চড়ে বখাটেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করছে। এদের অধিকাংশ ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজায় আসক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের ওজোপাডিকোর গেটের পাশে, গেট থেকে পশ্চিমে গোবিন্দপুর যাওয়ার সড়কে বিশেষ করে মাদরাসার পর থেকে মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন পর্যন্ত, পশু হাসপাতাল রোড, ডিগ্রি কলেজ গেটের উত্তরে, দারুস সালামের দক্ষিণ গেটে, মহিলা ডিগ্রি কলেজের ও পীরের বাড়ির মাঝামাঝি সড়ক, রথতলা, গোবিন্দপুর দোয়ারপাড়া, আনন্দধাম ব্রিজ, হাউসপুর এলাকা, উপজেলা পরিষদের পেছনের আমবাগান এলাকা, কালিদাসপুর শাদাব্রিজ, সোহাগ মোড়ে বখাটেদের উৎপাত সবথেকে বেশি। এছাড়াও বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও প্রাইভেট টিউশনি স্পটেও তাদের আধিপত্য চোখে পড়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক বলেন, বখাটের উৎপাতে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতে অনেক সময়ই বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের সময় সঙ্ঘবদ্ধ বখাটেরা মেয়েদের কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করলে গালমন্দ করা হয়। অনেক সময় বখাটেপনা বেড়ে যায়। মোবাইল নাম্বার, ফেসবুক একাউন্ট আছে কি-না, থাকলে কী নামে আছে তা জিজ্ঞেস করে। এ কারণে অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীর স্বাভাবিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ ব্যাহত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, বখাটেদের উৎপাত থেকে মেয়েকে রক্ষার জন্য তিনি সকালে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যান। মায়ের সামনেই সড়কের এক বিশেষ মোড়ে গেলেই বখাটেরা মেয়েকে কটূক্তি করে থাকে। মাকে পর্যন্ত পাত্তা দেয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজছাত্রী বলেন, সম্প্রতি কলেজের উদ্দেশে বের হলে তাকে সঙ্ঘবদ্ধ কয়েকজন ছেলে ঘিরে ধরেছিলো। নেতিবাচক কথাবার্তার সৃষ্টি হবে এই ভয়ে এসব কথা ঘরেও বলা যাচ্ছে না।
নবব শ্রেণির আরেক ছাত্রী ক্ষোভের সাথে বলেন, একটু সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি রথতলায় প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে মোটরসাইকেলে দুজন বখাটে উপস্থিত তার সামনে। কিশোরি ওই ছাত্রীকে দুই বখাটে মিলে ধরে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছিলো। তারপর থেকে প্রাইভেট পড়তে যেতে পারছেনা ভয়ে।
আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বখাটেদের উৎপাতের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মেয়ে। অভিভাবকেরাও একই অভিযোগ করে আসছেন। কিন্তু নানা চেষ্টা করেও উৎপাত বন্ধ করা যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও বিদ্যালয়ের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। এ পদ্ধতি বেশ কাজে লেগেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আলমডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক তাপস রশিদ বলেন, দেশের সমাজব্যবস্থা এখন ভয়াবহ অসুস্থ। এই অসুস্থতার কারণে তরুণ ও যুব সমাজের ভেতরে হতাশা তৈরি হয়েছে। সেই হতাশা থেকেও তারা সামাজিক অপরাধ করে যাচ্ছে। এ জন্য দায়ী রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থা, অভিভাবক, শিক্ষক, সুশীল সমাজসহ সবাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাংস্কৃতিক কর্মকা- নেই। দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এখন যতোটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সামাজিক উন্নয়নকে ততোটাই অবহেলা করা হচ্ছে।
শহরে বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি খন্দকার শাহ আলম মন্টু।