প্রধান বিচারপতির নীরবতা শ্বাসরুদ্ধকর : দুদু

স্টাফ রিপোর্টার: ছুটির বিষয়ে প্রধান বিচারপতির নীরবতাকে শ্বাসরুদ্ধকর বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, প্রধান বিচারপতি তো দিব্যি মন্দিরে গিয়ে পূজা দিচ্ছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করছেন। তাহলে কি প্রশ্ন থেকে যায় না- তিনি আদৌ ছুটির আবেদন করেছেন কি-না! আর ছুটি সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি এতো নীরব কেন? নিশ্চয় তাকে নীরব থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।

দুদু বলেন, আমরা দেখেছি, সরকারের রোষানলে পড়ে বিগত দিনে যারা গুম হয়ে আবার জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন পরবর্তীতে তাদের কেউ কোনো কথা বলেননি। এমন কি ফিরে আসার পর এক কলম লিখেনও নি। ধারাবাহিক এই গুমের সবশেষ শিকার কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজাহার। তবে কি অপেন সিক্রেট অ্যান্ড ইনডাইরেক্টলি প্রধান বিচারপতিও গুম হয়ে গেছেন? অতীতের ধারাবাহিকতা আমাদের এমনটি ভাবতে বাধ্য করছে। যদিও এখন কথা বলাও খুব বিপদ। খুবই কঠিন একটা সময় আমরা অতিক্রম করছি।

দেশের মধ্যে বর্তমানে যা হচ্ছে এগুলো কোনো স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যাশা করা যায় না এমন দাবি করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এতোদিন জানতাম ছাত্রদলের নেতাদেরকে বিনা ওয়ারেন্টে বিনা মামলায় ধরে নিয়ে গিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়। গুম করে ফেলা হয় যুবনেতা শ্রমিক নেতা কৃষক নেতাসহ ২০ দলের নেতা এবং ব্যাংকারদেরও। এগুলো আমাদের আতঙ্কিত করেছিলো। বিএনপি ও ২০ দলের পক্ষ থেকে আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু সরকার যথাযথ বক্তব্য এর প্রেক্ষাপটে দেয়নি।

তিনি বলেন, সবশেষ যে প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে সেটি হচ্ছে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে। হঠাৎ করেই আমরা জানতে পারি তিনি ছুটি নিয়েছেন। তাকে ছুটি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কখনও আইনমন্ত্রী বলেছেন তিনি নিজে নিজেই ছুটি নিয়েছেন, আবার কখনও দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটনি জেনারেল বলছেন- প্রধান বিচারপতি কেন ছুটি নিয়েছেন এটা তিনি জানেন না। বারের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকেও প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, প্রধান বিচারপতির ঘটনাই প্রমাণ করে আপনার অধীনে কেমন নির্বাচন হতে পারে। আর নির্বাচনে জয়লাভ করলেও বিরোধী দল যে ক্ষমতা পাবে বোকা ছাড়া কেউ তা বিশ্বাস করবে না। প্রধান বিচারপতি আপনার পছন্দের লোক, সেই জন্যই তো আপনি তাকে মনোনীত করেছিলেন। সেই প্রধান বিচারপতি যখন ষোড়শ সংশোধনীতে সঠিক এবং সত্য রায় দিয়েছেন এটা আপনি মানতে পারলেন না। এখান থেকে আপনার ক্ষোভ তৈরি হলো। তাকে ছুটি নিতে বাধ্য করা হলো। এটা যে তিনি লেখেননি, সই জাল করা হয়েছে এটা নিয়ে এখন আর কোনো বিতর্ক নেই। যারা স্কুল কলেজে পড়ে তারাও তো এতো কাঁচা কাজ করে না। যে কাজটি আপনি (প্রধানমন্ত্রী) করেছেন প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে। মাফ চান জাতির কাছে, ক্ষমা চান। এতে আপনারা ছোট হবেন না, কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষা পাবে। আত্মঅহঙ্কার ফ্যাসিবাদকে সারাজীবন কেউ রক্ষা করতে পারে না।

সরকারের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো রাগ করতে পারে সেই আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের অধিবেশনে কড়া ভাষায় কথা বলতে পারেননি এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই ভাইস-চেয়ারম্যান আরও বলেন, ভারত, চীনে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ভারত তো আমাদের গলায় বাঁধা বন্ধু, আমরা তো না খেয়েও তাদেরকে খেতে দেই। রাস্তা, বন্দর, কি দেই নাই তাদেরকে আমরা? তারা আমাদেরকে মারলেও আমরা তাদেরকে কিছু বলি না। কিন্তু মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদেরকে মারা শুরু করলো তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মিয়ানমারের প্রধান রাষ্ট্রীয় পরামর্শদাতা অং সান সু চির হাত ধরে বললেন- আমরা আপনাদের সাথে আছি। তারা রাগ করবেন বলে জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে জোরালো কোনো কথা বলেননি। কূটনৈতিকভাবে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন।

সামনের দিনগুলো আওয়ামী লীগের না, জনগণের- এমন দাবি করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, অতীত ভুলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। সব ভুল শুধরে গণতন্ত্রের পথে ফিরতে হবে। দেশবাসীকে জাগাতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে- সামনের দিনগুলো আওয়ামী লীগের নয়। আসছে দিনগুলো এ দেশের স্বাধীনতাকামীদের, গণতন্ত্রীদের এবং বাংলাদেশের লড়াকু সৈনিকদের। কারণ বাঙালিরা হচ্ছে বীরের জাতি, যোদ্ধার জাতি, বিজয়ী জাতি। তাকে পরাজিত করার কোনো শক্তি ও সম্ভাবনাই নেই। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি [সাগর-রুনী হল, ২য় তলা], ঢাকায় বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ও আজকের প্রেক্ষাপট শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির অন্যতম ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাড. আজহারুল ইসলাম, লায়ন্স ক্লাবের সাবেক কাউন্সিলর চেয়ারপারসন লায়ন এমএ রশিদ শাহ্ সম্রাট-এমজেএফ, ইসলামিক পার্টির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান এজাজ হোসেন, মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা শওকত আমীন, গণসংস্কৃতি দলের সভাপতি এস আল-মামুন, জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কেএম রাকিবুল ইসলাম রিপন, ইসলামিক পার্টির গাজী শফিউল্লাহ, এসএম কামাল উদ্দিন ইসমাইল, জুয়েল রানা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

Leave a comment