গাংনীর কেশবনগরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অনশন ॥ ছেলের অপকর্ম ঢাকতে প্রশাসনের দ্বারস্থ

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কেশবনগর গ্রামে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন করেছে স্কুলপড়ুয়া এক তরুণী। বাল্যবিয়ের অজুহাতে ছেলের অপকর্ম ঢাকতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে প্রেমিক সুজা উদ্দীনের পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার সকালে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে কিশোরীর পরিবারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ষোলটাকা ইউনিয়নের কেশবনগর গ্রামের নবম শ্রেণিপড়–য়া এক কিশোরীর সাথে একই গ্রামের মোস্তফা ইসলামের ছেলে কলেজছাত্র সুজা উদ্দীনের প্রেমসম্পর্ক হয়। বিয়ের প্রলোভনে তাদের সম্পর্ক গভীরে পৌঁছায়। কিশোরী ঘর বাঁধার স্বপ্নে কলেজছাত্রের বিভিন্ন আবদারে সাড়া দেয়। কিন্তু কয়েক দিন আগে থেকে প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে সুজা উদ্দীন। বিষয়টি পরিবার ও প্রতিবেশীদের মাঝে মুখরোচক গল্পের জন্ম দেয়। নিরুপায় হয়ে ওই কিশোরী গতকাল শনিবার সুজা উদ্দীনের বাড়িতে যায়। বিয়ের দাবিতে শুরু করে অনশন। তবে কৌশলে সুজা উদ্দীনকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেয় তার পরিবার।
এদিকে সুজা উদ্দীনের পরিবার বিয়েতে রাজি না হলে সম্মানহানিতে পড়েন কিশোরী প্রেমিকা ও তার পরিবার। গ্রামের উৎসুক মানুষ তাকে দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করে। কিন্তু বিয়েতে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় প্রেমিক-প্রেমিকার বয়স। এ সুযোগ কাজে লাগায় সুজা উদ্দীনের পরিবার। ছেলের অপকর্ম ঢাকাতে বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। অবশেষে প্রশাসনের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে ভেস্তে যায়।
কিশোরীর পরিবারে অভিযোগ, আইনানুগভাবে বাল্যবিয়ে দ-নীয়। কিন্তু একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সাথে সুজা উদ্দীন যে অপকর্ম করেছে তার বিচার কী হবে? বাল্যবিয়ের ফাঁদে বিয়ে বন্ধ হয়েছে তাতে কিশোরীর পরিবারের মন্তব্য নেই। তাহলে সুজা উদ্দীনের কী বিচার হবে না? প্রশ্ন কিশোরীরর পরিবারের।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ওই কিশোরীর বিয়ে ঠিক হয়। বিভিন্ন স্থানে যেভাবে গোপনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে সেভাবেই তাকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো পরিবার। কিন্তু বাঁধ সাধে সুজা উদ্দীন। কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। এতে পরিবারের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়েত আপত্তি করে ওই কিশোরী। ফলে ভেঙে যায় বিয়ে। এ সুযোগ কাজে লাগায় অভিযুক্ত লম্পট সুজা উদ্দীন। কিশোরী প্রেমিকাকে ফুঁসলিয়ে ইচ্ছা পূরণ করে। এরপরেই প্রেমিকাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। প্রেমিকা বাধ্য হয়ে বিয়ের দাবিতে সুজা উদ্দীনের বাড়িতে অনশন করে। সুজা উদ্দীনের অপকর্ম ঢাকতে কৌশলে বাল্যবিয়ে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে তার পরিবার। এতে সাময়িক জয় হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। কিশোরীর সাথে প্রতারণা-ছলনাসহ বিভিন্ন সম্পর্কের সুবিচার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে কিশোরীর পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গেলো শুক্রবার আনন্দবাস গ্রামে ৮ম শ্রেণিতে পড়–য়া এক স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা ও অর্ধশতাধিক বরযাত্রীর আপ্যায়ন করা হয়েছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এছাড়াও গত দুই শুক্রবার ধানখোলা গ্রামের উত্তরপাড়ায় দুই কিশোরীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। প্রতিদিনই গাংনী উপজেলায় বাল্যবিয়ে হচ্ছে। কোনোটি গোপনে আবার কোনোটি প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে। এসব বিয়ে বন্ধ কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। কেশবনগর গ্রামের ওই প্রেমিক-প্রেমিকার বিয়ে বন্ধে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা প্রতিটি বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রেই যেন পরিলক্ষিত হয়ে সে দাবি এলাকাবাসীর।

Leave a comment