আহত বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান ধুন্দু জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

জীবননগর উথলীতে ট্রেনের ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ পাজেরো জিপ
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার উথলী ফার্মপাড়া রেলগেটে সৈয়দপুরগামী আপ আন্তঃনগর সীমান্ত ট্রেনের ধাক্কায় আহত বিএনপি নেতা পরিবহন ব্যবসায়ী হাজি সাইদুর রহমানকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি। তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুর নেয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে। অপরদিকে এ দুর্ঘটনায় গুরতর আহত স্ত্রী পারভীন সুলতানা বন্যাকে যশোর নিয়ে চিকিৎসা শেষে এনে বাসায় রাখা হয়েছে। তাদের দুজনের সুস্থতার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের নিকট দোয়া কামনা করা হয়েছে। অপরদিকে উথলীর ফার্মপাড়ার গুরুত্বপূর্ণ রেলগেটটিতে গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার উথলী ফার্মপাড়ার অরক্ষিত রেলগেটে সৈয়দপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসের সাথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জীবননগর শহরের বাসিন্দা উথলী গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে হাজি সাইদুর রহমান ধুন্দু জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি উথলী ইউনিয়নের পরিষদের দু বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি পরিবহন ব্যবসার পাশাপাশি উপজেলা বিএনপির একাংশের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রী বন্যাকে নিয়ে নিজে পাজেরো জিপ চালিয়ে শহরের বাসায় ফিরছিলেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে উথলী ফার্মপাড়ার অরক্ষিত রেলগেট পার হওয়াকালে রেললাইনের ওপর তার জিপের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন আসতে দেখে তিনি পুনরায় দ্রুত স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় খুলনা থেকে সৈয়দপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন তাদের জিপটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। ট্রেনের ধাক্কায় জিপটি দুমড়েমুচড়ে প্রায় ২০০ গজ দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে এবং এর ভেতরে স্ত্রীসহ তিনি আটকা পড়েন।
এলাকাবাসী অচেতন অবস্থায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে রাতেই সাইদুর রহমানকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ও স্ত্রীকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। ধুন্দুর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। স্বজনরা তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। গতকাল শনিবার দফায়-দফায় চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তার মস্তিষ্কের অসংখ্য স্থানে রক্তক্ষরণ হওয়ার আলামত দেখতে পাওয়া গেছে। তাকে আইসিইউতে ৭২ ঘণ্টার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত জ্ঞান ফেরেনি তার। অবস্থার কোনো উন্নতিও হয়নি। প্রয়োজন হলে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হতে পারে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও আহত ধুন্দুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার স্বজনেরা সিঙ্গাপুরে নেয়ারও পরামর্শ করছেন বলে তার জামাতা সাংবাদিক মামুন-উর-রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানিয়েছেন। একদিকে স্ত্রী বন্যাকে গতকাল যশোরের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক্স চিকিৎসক ডা. আব্দুর রউফের নিকট নেয়া হয়। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখেছেন। বন্যা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও কোনো হাঁড় ভাঙেনি বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। ফলে চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে।
এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছে, উথলী ফার্মপাড়া অরক্ষিত রেলগেটটি গুরুত্বপূর্ণ ও চর্তুঙুখি একটি রেলগেট। প্রতিদিনি এ রেলগেট দিয়ে কয়েকশ যানবাহন ও মনুষ চলাচল করে থাকে। অরক্ষিত রেলগেট হওয়ায় প্রায়শ: এখানে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ট্রেনের ধাক্কায় অকালে ঝরে গেছে অনেক প্রাণ। এ অবস্থায় এলাকাবাসী গুরত্বপূর্ণ এ রেলগেটটিতে অবিলম্বে গেটম্যান নিয়োগের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছে।

Leave a comment