হে বিশ্ববাসী আমি নূর কাজল রোহিঙ্গা বলছি

স্টাফ রিপোর্টার: ‘আমার বাবা আমাকে কোলে নেয়। এমন সময় সেনারা বাইরে থেকে গুলি করে। জানলা দিয়ে গুলি এসে বাবার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বাবা ঘরের মেঝেতে পড়ে যান। আমি ভয়ে কাঁদছিলাম। বাবা তখনও ছটফট করছেন। তার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিলো। তখন সেনারা আমাদের ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা দৌড়ে পালালাম। সেনারা আমাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিলো। আমার বাবা ঘরের ভেতরেই ছিলেন। বাবাকে আর দেখতে পারিনি। পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।’ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একজন নূর কাজল। ১০ বছরের শিশুটি এভাবে তার পরিবারের ওপর নির্যাতন দৃশ্য বর্ণনা করছিলো। কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে নূর কাজলের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক কেটি আননল্ড। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নূর কাজল আবার ফিরে যেতে চায় তার গ্রামে। যেখানে বাবাকে বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ছটফট করা অবস্থায় রেখে এসেছিলো নূর কাজল।

নূর কাজল বলেন, ‘আমি বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চাই। আমি আমার গ্রামে ফিরে যেতে চাই। আমার গ্রামটি অনেক সুন্দর। আমি সেখানে একটি মাদরাসায় পড়তাম। মাদরাসায় আমি কোরআন শিখতাম। আমাদের ঘরটি বেশি বড় ছিলো না। কিন্তু পরিবারের ৭ জন মিলে আমরা খুব সুখে ছিলাম।’ ‘সেনাদের হামলার পর আমরা পালিয়ে আসি। আমরা জীবন বাঁচাতে দৌড়তে থাকি। তিন দিন ধরে বন, বিল, খাল আর নদী পেরিয়ে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। পথে আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছিলো। কিন্তু কোনো খাবার ছিলো না। এখন আমার বাবার কথা মনে পড়ছে।’ ‘আমাদের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে অনেকে সাহায্য করেছিলো। তারা খুব ভালো মানুষ ছিলো। আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো আনন্দ পাইনি। কারণ আমার বাবার কথা মনে পড়ছিলো। এখনও আমার বাবাকে মনে পড়ছে।’ ‘আমার বাবা একজন কাঠুরে ছিলেন। তিনি খুবই সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। গ্রামের সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসত। বাবাও আমাদের খুব ভালোবাসতেন।’ ‘আমি বাংলাদেশে এসেও খুব কষ্টে আছি। কারণ সবসময় আমার বাবাকে মনে পড়ে। এখানকার পরিবেশও ভালো না। বাথরুম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নেই।’ ‘এখন আমি আমার গ্রামে ফিরে যেতে চাই। এজন্য বিশ্ববাসীর কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। আমাকে আমার গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে ১৭৬টি গ্রামের ৪ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রোহিঙ্গারা।

Leave a comment