গাংনী প্রতিনিধি: ব্যাভিচারের অভিযোগে যুবক-যুবতীকে শিকলে বেঁধে বিচারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে যুবকের নামে ধর্ষণ মামলা করেছে ওই যুবতী। মামলার আসামি হিসেবে এখন জেলহাজতে ওই যুবক। মঙ্গলবার দিনগত গভীর রাতে যুবতীর বাড়ির পাশ থেকে গ্রামবাসী তাদের আটক করে শিকল দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সহড়াবাড়িয়া গ্রামে। অভিযুক্ত যুবক সহড়াবাড়িয়া গ্রামের মৎস্য খাদ্য ব্যবসায়ী এবং যুবতী ওই গ্রামের এক কৃষকের কন্যা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ষোলটাকা ইউনিয়নের সহড়াতলা রাইমনতলাপাড়ার এক যুবতীকে গভীর রাতে একই গ্রামের বাজারপাড়ার ব্যবসায়ী রিপন হোসেনকে আটক করে গ্রামের কতিপয় যুবক। রাতে সড়কের পাশে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে তাদের দুজনকে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে গতকাল বুধবার ভোর থেকে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষ তাদের দেখতে ভিড় করে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে দুজন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের দাবি করেন গ্রামের কয়েক যুবক। বিয়ের প্রলোভনে দেহভোগের অভিযোগ করেন যুবতী। কিন্তু বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করেন রিপন হোসেন।
এদিকে রাত থেকেই দুজনকে আটক করে মৃদৃ চড়-থাপ্পড় দেয় গ্রামের অনেকেই। যুবতীর পিতার দাবির প্রেক্ষিতে বিচারের চেষ্টা করেন ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন মাতবর। তাদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে তামাসা ও অপমানজনক কথাবার্তায় ভোর হয়। ভোরে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে যুবতীকে আলাদা করা হয়। রিপনকে সড়কে পাশে বেঁধে রাখা হলেও যুবতীকে তার পিতার ঘরে আটকে রাখা হয়। এভাবে বেঁধে রাখার বিষয়টি মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শামিল বলে উল্লেখ করেন কেউ কেউ। তারা যে অপরাধ করেছে তার দৃষ্টান্ত সাজার ব্যবস্থা না করে বেঁধে রেখে গ্রাম্য সালিসে বিচারের চেষ্টায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দেয়। অবশ্য পুলিশে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে সালিস ব্যর্থ হয়। ষোলটাকা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য ও সহড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, বেঁধে রাখার সাথে গ্রাম মাতবররা জড়িত নন। মেয়ের পিতা তাদের বেঁধে রেখে বিয়ের দাবি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে ওই যুবতীর পিতা বলেন, অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা অবস্থায় বছরখানেক আগে মেয়ের বিয়ে দেই। তিন মাস সংসার করার পর তা ভেঙে যায়। মেয়ে আমার বাড়িতেই রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে? তাই মেয়ের নামে উপযুক্ত সম্পদ কিংবা অর্থ নিশ্চিত করে রিপনকে বিয়ে করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে যুবতীর পিতার প্রস্তাবে রাজি হয়নি রিপন। এর আগে ৫-৬টি বিয়ে করলেও সবগুলো ডিভোর্স হয়েছে। তাই পরিবারের কেউ রিপনের খোঁজখবর নিতে আসেনি। বিয়ের প্রস্তাবেও পরিবারের কেউ সাড়া দেননি।
ওই যুবতী বলেন, মাস খানেক আগে একদিন বিকেলে আমার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে রিপন মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলো। মোটরসাইকেল থামিয়ে আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। তার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে কথা বলার দাবি জানিয়ে সে চলে যায়। পরে আমি তার সাথে মোবাইলে কল দিয়ে কথা বলি। এক পর্যায়ে দুজনের মাঝে প্রেমসম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বিয়ের প্রলোভনে রিপনের ডাকে মঙ্গলবার রাতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হই। এ সময় প্রতিবেশীরা আটক করেছে। রিপনের সাথে বিয়ে করে সংসার পাতার দাবি করে যুবতী।
এদিকে সাজানো ঘটনায় ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন অভিযুক্ত রিপন হোসেন। তিনি অকপটে স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, টাকার বিনিময়ে আমি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে এসেছিলাম। যুবতীর পিতাসহ আশপাশের কয়েক যুবক আগে থেকেই অবস্থান করেছে। কিন্তু বিষয়টি আমাকে বুঝতে দেয়নি ওই যুবতী। আমার সাথে বিয়ে ও টাকা ভাগানোর জন্য তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেঁধে রাখে। এদিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার ঘটনার খরব পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রিপনকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়। একই সাথে থানায় পৌঁছায় ওই যুবতী ও তার পিতা। তবে রিপনের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে প্রেমের প্রলোভনে দেহভোগের অভিযোগ তুলে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন যুবতীর পিতা। ধর্ষণ মামলাটি গাংনী থানা এজাহারভুক্ত করে। একমাত্র আসামি হিসেবে রিপনকে গতকালই মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করে গাংনী থানা পুলিশ।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, অপরাধ করলে বিচার করবেন আদালত। বিচার কাজে সহযোগিতা করাই পুলিশের কাজ। এ ধরনের ঘটনার বিচার করার এখতিয়ার নেই সমাজ কিংবা মাতবরদের। ধর্ষণ মামলার কারণে ওই যুবতীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। মামলা তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
গাংনীতে যুবক-যুবতীকে শিকলে বেঁধে বিচারের চেষ্টা ব্যর্থ ॥ ধর্ষণ মামলায় যুবক কারাগারে
