তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে
মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ভিভিয়ান তানকে উদ্ধৃত করে একটি বার্তা সংস্থা গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং একটি সেনা ক্যাম্পে গত ২৪ আগস্ট রাতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। সেই সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু হয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্রোত। সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে।
গত কয়েক দশক ধরে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এই দফায় আরও তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা আসতে পারে বলে গত ৬ আগস্ট জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় জাতিসংঘ যে হিসাব দিলো তা তাদের আগের ওই ধারণার চেয়েও পৌনে এক লাখ বেশি। এদিকে রোহিঙ্গা সংকট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনাকে জাতিগত নির্মূল অভিযানের ধ্রুপদী উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এবং সুইডেন ও যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কক্সবাজারের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, এই শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে, যেন তারা নাগরিক হিসেবে অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে।
মিয়ানমারের পক্ষে চীন: রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকের আগে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে এ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি বৈঠকটি ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকের প্রাক্কালে চীন আবারও মিয়ানমারের প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যে অভিযানকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে বর্ণনা করেছে, চীন আবারও সেই অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
জানা গেছে, ব্রিটেন এবং সুইডেনের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। কিন্তু সেখানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত ক্ষীণ বলেই মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশের যে কোনো দেশ একটি যদি কোনো প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দেয়, তাহলে সেটি আটকে যায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকে তাই ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, চীন এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার সরকারের গৃহীত সব ব্যবস্থাকে শতভাগ সমর্থন জানিয়ে চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার চীন আবারও বলেছে, তারা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মিয়ানমার সরকারের পাশে আছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং বলেছেন, ‘মিয়ানমার সরকার তাদের জাতীয় উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যে চেষ্টা করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তার পাশে থাকা। মনে করা হচ্ছে, চীন মিয়ানমারের পক্ষে এ ধরনের বিবৃতি দিয়েছে যাতে করে নিরাপত্তা পরিষদের আজকের বৈঠকে মিয়ানমারের নিন্দা করে কোনো প্রস্তাব আনা না যায়। রাশিয়ার অবস্থানও মিয়ানমারের পক্ষে বলে মনে করা হচ্ছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব যদি ভোটাভুটিতে দেয়া হয়, তাহলে রাশিয়া তাতে কতোটা সমর্থন দেবে, সেটা নিয়ে সংশয় আছে। জাতিসংঘের কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কোনো মাথা গলাক, সেটা চীন চায় না।
নিরাপত্তা পরিষদের আরেক স্থায়ী সদস্য অবশ্য রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে তাদের দীর্ঘ নীরবতা ভেঙেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সহিংসতার মুখে যেভাবে রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে তাতে বোঝা যায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে বেসামরিক মানুষকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
উল্লেখ্য, নিরাপত্তা পরিষদে গত সপ্তাহে আরেকটি বৈঠকেও চীন মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো।