চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ের অটোচালক কামারুলকে হত্যা করে অটো ছিনতাই মামলা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ের অটোচালক কামরুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি কলিম মোল্লা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সে অটোচালক কামরুল ইসলামকে হত্যা করে তারা ৪ জন অটো নিয়ে মেহেরপুরে যাওয়াার কথা স্বীকার করে।
পুলিশসূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাতে দামুঢ়হুদা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুলিশ চুয়াডাঙ্গার দৌলতদিয়াড়ের ইজিবাইকচালক কামরুল হত্যা মামলার আসামি আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ইলিয়াস মোল্লার ছেলে কলিম মোল্লাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর কলিম মোল্লাকে ইজিবাইক বা অটোচালক কামরুল হত্যাকা-ের ব্যাপারে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাবাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশের নিকট ধীরে ধীরে মুখ খুলে। এক পর্যায়ে ওই হত্যাকা- সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সে পুলিশকে জানায়। পুলিশসূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া কলিম মোল্লা (৩০) জানায় যে, গত ২৮ আগস্ট দিনগত রাতে তারা ইজিবাইকচালক কামরুলকে হত্যার কয়েকদিন পূর্বে ওই হত্যাকা-ের নীলনকশা তৈরি করে। ইজিবাইকচালককে চূড়ান্তভাবে হত্যার আগে কীভাবে ওই নির্মম হত্যাকা- ঘটাবেন তার প্রস্তুতি করে নেন। তারা ২৮ আগস্টের কয়েকদিন আগে সন্ধ্যাবেলা চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে কিছুটা বেশি ভাড়া দেয়ার লোভ দেখিয়ে অর্থাত ১ হাজার টাকায় ইজিবাইকচালক কামরুলের সাথে ভাড়া মিটিয়ে তার ইজিবাইকে চড়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। তবে ওই দিন ভাড়া পরিশোধ করেনি তারা। ১ম দিন ভাড়া পরিশোধ না করে জানিয়েছিলো আগামীকাল আবারও ভাড়ায় নেবেন, তখন একবারে ২ দিনের টাকা পরিশোধ করে দেবেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনামাফিক গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় কলিম মোল্লাসহ আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের জামায়াত আলীর ছেলে আকরাম আলী, লিয়াকত আলীর ছেলে মিনাজ আলী ও রমজান আলীর ছেলে মাসুদ রানা চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ১ হাজার টাকায় ভাড়া মিটিয়ে আবারও ইজিবাইকচালক কামরুলের ইজিবাইকে তারা হাটবোয়ালিয়া আসেন। পরে হারদীসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে গভীর রাতে শ্যামপুর-যাদবপুর গ্রামের বালির ক্যানেলপাড়ে নিয়ে গিয়ে কামরুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। লাশ ক্যানেলের পানিতে ফেলে রেখে ইজিবাইক নিয়ে পালায়। তারা ইজিবাইকটি মেহেরপুর শহরে রানার বাড়িতে রেখে আসে। গ্রেফতারের পর কলিম মোল্লার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ মেহেরপুরের রানার বাড়ি থেকে ওই ইজিবাইকটি উদ্ধার করে।
এদিকে, হত্যাকা-ের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেফতার হওয়া কলিম মোল্লাকে গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে সোপর্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। গতকাল পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে বলে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের কতিপয় কৃষক গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা বালির ক্যানেল নামের জিকে সেচ প্রকল্পের ক্যানেলে পাটের জাগ দেখতে গেলে একটি লাশ পানিতে ভাসতে দেখেন। ঘটনাটি সাথে সাথে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে জানালে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) লুতফুল কবীর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সকাল ৯টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। সে সময় উদ্ধারকৃত যুবকের লাশের পরিচয় কেউ বলতে পারেন নি। পরে এ লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের দৌলতদিয়াড় থেকে আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে যান আব্দুস সালাম। তিনি নিজের ছেলে কামরুল ইসলামের লাশ দাবি করেন। কামরুলের হত্যার ৯ দিন পর তার মা ৭ মাসের শিশুসন্তান রেখে পুত্রশোকে মৃতুবরণ করেন।