দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলেই মামলা দেবে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) এবং ভোটার তালিকা স্বচ্ছ করতে এবার কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেউ একবারের বেশি ভোটার হওয়ার চেষ্টা বা ভোটার হলেই তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে। এরইমধ্যে সব পর্যায়ে এ নির্দেশনা পৌঁছে গেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সারাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েকবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসির সূত্রগুলো জানায়, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০ হাজারের মতো দ্বৈত ভোটার হওয়ার আবেদন পড়ে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিগোচর হলে ইতোপূর্বে দ্বৈত ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনকারীদের দ্বিতীয় আবেদনটি বাদ দেয়া হতো। অর্থাত, দ্বিতীয়বার ভোটার হওয়ার জন্য যে এলাকা থেকে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সেই আবেদনটি সিস্টেম থেকে ডিলিট করে দিত নির্বাচন কমিশন। ইসির পর্যবেক্ষণে এসেছে, আগে অনেকেই না বুঝে বা ভুল সংশোধনের জন্য পুনর্বার ভোটার হওয়ার আবেদন করলেও বর্তমানে অনেকে অপকর্মের জন্য বা অসত? উদ্দেশ্যে আবেদন করছেন। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপ-সচিব পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দ্বৈত ভোটার হওয়া আইনত অপরাধ। এতে দুই ধরনের বিপত্তি হয়। প্রথমত, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। দ্বিতীয়ত ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে বড় কোনো অপরাধ করার প্রবণতাও দেখা দেয়। ইতোমধ্যে এনআইডি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ছাড়াও অন্যের সম্পত্তি হস্তগত করার অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ যেহেতু ভোটার তালিকা নিয়ে এখনো পুরোপুরি সচেতন নয়, তাই ইতোপূর্বে দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করলেও আইনের প্রয়োগ অর্থাৎ, মামলা না করে ছাড় দেয়া হতো। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ দেয়া হবে না। ভোটার তালিকা আইন-২০০৯ অনুযায়ী, দ্বৈত ভোটার হওয়া বা চেষ্টার বিষয়টিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তত দু’বছর জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, দ্বৈত ভোটার হওয়া স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়নের অন্তরায়। এছাড়া দ্বৈত ভোটার হওয়ার তো দরকার নেই। কোনো ভুল থাকলে বা ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে উপযুক্ত প্রমাণসহ আবেদন পেলেই আমরা তা সমাধান করে দিই। এ নিয়ে যথেষ্ট প্রচারণাও চালানো হয়েছে। কাজেই এখন আর বলার সুযোগ নেই, যে সংশোধন বা স্থানান্তর করার বিষয়টি অজানা। তাই যারাই দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করবেন, নিশ্চয় তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। এজন্য কোনো ব্যক্তি দ্বৈত ভোটার হলে বা হওয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। মাঠ পর্যায়ে এরইমধ্যে সে নির্দেশনা দিয়ে দেয়াও হয়েছে। দেশে ভোটার রয়েছে ১০ কোটি ১৭ লাখের মতো। বর্তমানে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। ৩৫ লাখের জন্য নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আবেদন করেছেন। যাদের ছবি তুলে ও আঙুলের ছাপ নিয়ে এখন রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। তাই নতুন আবেদনকারীর কেউ যদি আগে ভোটার হয়ে থাকেন, আঙুলের ছাপ দেয়ার সময় ধরা পড়ে যাবেন।

Leave a comment