জহির রায়হান সোহাগ: ঈদের দিন আবহাওয়ার কিছুটা অবনতি হলেও চুয়াডাঙ্গার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দে একটুও ভাটা পড়েনি। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিনোদন পিয়াসীরা ঠিকই মেতেছিলো ঈদ আনন্দে। ঈদের দিন থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে দেখা গেছে ছোট-বড়, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ওইসব স্থানগুলো ঘিরে তাদের যতো ব্যস্ততা ছোটাছুটি। বিশেষ করে, বন্ধুদের সাথে মোবাইলফোনে সেলফি তোলার বিষয়টি ছিলো দেখার মতো।
চুয়াডাঙ্গার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিশুস্বর্গ, পুলিশপার্ক, ডিসি ইকো পার্ক ও মেহেরুন নেছা শিশু পার্ক। এছাড়া ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে আটকবর ও বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত আটচালা ঘর অন্যতম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এসব স্থানগুলো যেন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বড়দের চেয়ে ছোট ও তরুণ-তরুণীরা আনন্দ-উচ্ছাসের মাধ্যমে ঈদের খুশির বহির্প্রকাশ করছে। ঈদের নতুর পোশাক পরে পরিবার পরিজনসহ তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরসহ সকল শ্রেণির মানুষ ছুটে যান জেলা শহরের শিশুস্বর্গ ও পুলিশ পার্কে।
জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা মেহেরুন শিশুপার্ক অন্যতম। এটি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের কাছে পার্কটি বিনোদনের নতুন খোরাক জুগিয়েছে। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এ পার্কে। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, পার্শ¦বর্তী কয়েক জেলার ভ্রমণপিপাসুরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাস, ট্রাক, অটোরিকশা, নসিমন, আলমসাধু ও পাখিভ্যান রিজার্ভ করে ছুটে যাচ্ছেন প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে। বাদ পড়েননি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ওই বিনোদন কেন্দ্রে আনন্দ উল্লাস করে ভেসে বেড়াচ্ছেন শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সের দর্শনার্থীরা। পার্কে ঈদের ছুটিকে রঙিন করতে উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি ছিলো না। ওই পার্কে ঘুরে দেখা গেলো বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘোরা, মোবাইলে ছবি তোলা, হেঁটে পুকুরের চারদিক ঘোরা, রাইডসে চড়ে বেড়ানো নিয়ে যেন মেতে উঠেছে সবাই। শুধু নিজেরা না, আদরের ছোট্ট সন্তানটিকেও নিয়ে এসেছেন মজার মজার রাইডস উপভোগ করাতে। এছাড়াও ঝরনা, মাটির নিচে আজব গুহা ও মিনি চিড়িয়াখানার সামনে দেখা গেলো সবচেয়ে বেশি ভিড়। মিনি চিড়িয়াখানায় বন্য পশুপাখির বিচিত্র সব কা–কারখানা দেখে মজার সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বানরের বাদরামি দেখেও মুগ্ধতা কাটে না তাদের।
দর্শনার্থীরা জানান, শুধু ঈদ নয়, বিভিন্ন উৎসবে মেহেরুন শিশু পার্কে বেড়াতে যান তারা। অন্য সময় মেহেরুন শিশু পার্কে দিনে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হলেও ঈদের পরের সময়টাতে দিনে অন্তত ৫০ হাজার লোকের সমাগম হচ্ছে বলে জানান পার্কের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহেদ পিপুল। তিনি আরও জানান, পার্কটি প্রতিষ্ঠার শুরুতে মানুষের তেমন সমাগম ছিলো না। তবে রুচি সম্পন্ন পরিবেশ, শিশুদের জন্য রাইডস, মিনি চিড়িয়াখানা থাকায় এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করায় পার্কে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটছে। শুধু চুয়াডাঙ্গা বা এর আশপাশের জেলা নয়, ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দামুড়হুদা উপজেলার শিবনগরে প্রকৃতির এক মনোরম পরিবেশে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ডিসি ইকো পার্ক দর্শনার্থীদের পদচারণায় ছিলো মুখর। পার্কের জলাশয়ে নৌকায় ঘোরা, গোসল করাসহ মোবাইলে সেলফি তোলার বিষয়টি ছিলো চোখে পড়ার মতো। ডিসি ইকো পার্কে ঘুরতে অনেক দর্শনার্থী মাথাভাঙ্গাকে জানান, ঈদের আনন্দকে উপভোগ করার জন্য তারা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্যই এখানে এসেছেন। সবাই মিলে আড্ডা দেয়ার মজাই আলাদা। অনেক দিন ব্যস্ত থাকার পর পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়ানোর সুযোগ পেয়ে আনন্দের অনুভূতি জানালেন তারা।
হাজারো দর্শনার্থীদের জমায়েতে মুখরিত দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান আটকবর। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক হানাদারদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে মূলত নির্মিত ওই আটকবর। এখানে আট শহীদদের বেদিতে উঠে ও আট শহীদ স্মৃতি কমপ্লেক্স এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছবি তোলেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা ঘর দেখতেও ভিড় জমাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ সপ্তাজুড়েই জেলার ঐতিহাসিক স্থান, পার্ক ও বিনোদন কেন্দগুলোতে ভিড় জমাবেন দর্শনার্থীরা।