আলমডাঙ্গার হাঁপানিয়ায় ঈদের আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে রূপ নেয় বিশাদে

জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুতে কাতর পুরো পরিবার
আলম আশরাফ/শাহাদত লাভলু: জয়নাল আবেদীনের মৃত্যুতে কাতর পুরো পরিবার। ছোট দু কন্যা সন্তানকে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। জয়নালের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনও স্বামী হারিয়ে নির্বাক। যে তার পৈত্রিক বাড়ির ভিটেটুকু ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি, তার সংসার এখন কীভাবে চলবে? কে দেখবে তার অবুঝ দু সন্তানকে। এসব প্রশ্নের জবাব মিলছেনা।
গতকাল শোকার্ত স্ত্রীর সামনে দাঁড়ালে, স্ত্রী ফাতেমা বলেন, স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া আর কিই চাওয়ার আছে বলুন! একথা বলেই মুর্ছা যান। স্বামীর মৃত্যর পর থেকেই তিনি বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কারও মুখে যেনো কথা ফুটছে না। কে কাকে শান্তনা দেবেন, কি বলে শান্তনা দেবেন- ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। যারাই বাড়িতে ঢুকছেন তারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না জয়নাল বেঁচে নেই। শোক ও সমবেনা জানাতে গিয়ে সকলে ঝরাচ্ছেন অশ্রুজল।
ঈদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে আলমডাঙ্গার হাঁপানিয়া গ্রামে দু গ্রুপের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে গুরত্বর আহত হন ওই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে জয়নাল আবেদীন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় সাথে সাথে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অপারেশনের মাধ্যমে মাথা থেকে গুলি বের করা হলেও জয়নালকে বাচানো যায়নি। গতপরশু সোমবার দুপুরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে তার লাশ নেয়া হয় গ্রামে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাঁপানিয়া ঈদগা ময়দানে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়।
সরেজমিনে জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, হাঁপানিয়া উত্তরপাড়ার আব্দুল কুদ্দুসের ৩ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে জয়নাল আবেদীন দ্বিতীয়। জয়নাল আবেদীনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। অভাবে সংসার। বড় ছেলে শাহিন আলম অল্প একটু লেখাপড়া করেই শুরু করে দিনমজুর। একপর্যায়ে তিনি রাজমিস্ত্রীর জোগালের কাজ শুরু করেন। এখন অবশ্য পুরোপুরি মিস্ত্রি। বিয়ে করে আলাদা। আর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রজনী খাতুনের বয়স ৯ বছর। সে স্থানীয় স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের বয়স ৬। তার অবশ্য এখনো স্কুলে যাওয়া হয়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গিয়ে জয়নালের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন জানান, ঈদের দিন ছেলে শাহিন আলম ও শ্বশুড় আব্দুল কুদ্দুস আগেই নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। জয়নাল বাড়িতেই ছিলেন ঈদগায়ে গ-গলের কথা শুনে ছেলে ও পিতার খোঁজ নিতে গিয়ে ঈদগাও সংলগ্ন রাস্তার ওপর গুলি ও বোমার আঘাতে আহত হন তিনি। তার মাথায় গুলি লেগে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।