অপরাধমূলক কর্মকান্ডের হোতাদের অনেকেই শিশুদের ঢাল হিসেবে কাজে লাগায়। বিশেষ করে শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযান তৈরির কারখানায় শিশুরাই যেন প্রস্তুতকারক। অথচ লেদের মতো কোনো কারখানায় শিশুদের কাজ করানোরই বৈধতা নেই। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় আলমাডাঙ্গায় অবৈধযান তৈরির কারখানার মালিকসহ ৪ শ্রমিকের জরিমানা শীর্ষক প্রতিবেদনে যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে দেখে সচেতন পাঠকদের মাঝে নিশ্চয় শিশুশ্রম প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। শুধু শক্ত কাজেই নয়, শিশুদের মাদকপাচারের মতো অপরাধমূলক কাজেও হরহামেশাই ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিরোধে অবশ্যই আইনের যথার্থ প্রয়োগ প্রয়োজন।
শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধযানের সংখ্যা অবশ্যই একদিনে এতো হয়নি। দিনের পর দিন প্রশাসনের নীরবতার সুযোগেই অসংখ্য কারখানায় দিনরাত দেদার তৈরি হয়েছে অবৈধযান। এখনও তৈরি হচ্ছে জেলা শহর থেকে শুরু করে শহরতলি কিংবা গ্রামপর্যায়ের হাট-বাজারেও। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট অবৈধযানের সংখ্যা কতো? তা নিশ্চিত করে বলাই শুধু কঠিন নয়, অনুমানও অনেকটা অসম্ভব। তবে সেই কাক গণনার মতো করে একটা সংখ্যা বলে দিলেও দেয়া যায়। কেননা, অবৈধ এ যানের রেজিস্ট্রেশন নম্বর যেমন নেই, তেমনই নেই কোনটির মালিক কে তারও প্রমাণ বা স্বীকৃত সনদ। সে কারণে এসব অবৈধযান চালকদের মেরে ধরে কেড়ে নিয়ে চম্পট দিয়ে ছিনতাইকারীর মালিক সাজার সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি অঙ্গহানি। পঙ্গুত্বের বোঝা বেড়েই চলেছে। অবৈধযানের কারণে কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্যের মালামাল বহন সহজলভ্য হলেও সড়ক মৃত্যুপুরী করে তোলার কারণেই মন্ত্রণালয় থেকে শ্যালোইঞ্জিন চালিত যানকে অবৈধ ঘোষণা করে তা সড়ক থেকে উচ্ছেদের পরিপত্র বহুদিন আগেই জারি করেছে। উচ্চ আদালতও সড়কে এসব যান চলাচল কঠোর হস্তে তা বন্ধ করার আদেশও দিয়েছেন। তারপরও দেদার চলে, চলছে। শুধু চলছেই না, প্রতিদিন অসংখ্য কারখানায় তৈরিও হচ্ছে অবৈধযান। অধিকাংশ অবৈধযানেরই শ্রমিকদের অধিকাংশই শিশু। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কালিদাসপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত শ্রমিকসহ মালিকের অর্থ দন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ মোটরযান তৈরি ও বিক্রির অপরাধে অর্থ দন্ডাদেশ দেয়া হয়। শিশু শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোও অপরাধ। মালিক অবশ্য এ অপরাধে দন্ডিত হয়েছেন কি-না তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
শুধু আলমডাঙ্গার কালিদাসপুরে যে কারখানা তা নয়, জেলার প্রায় প্রতিটি বাজারে অবৈধযান তৈরির কারখানা বা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ রয়েছে। দেদার তৈরি হয়, হচ্ছে। ফলে দু-একটি কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নয়, সকল কারখানার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে না পারলে কিছু প্রশ্ন দানা বাঁধবে। একই সাথে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে শক্ত কাজ করানো রোধে শিশুর অভিভাবকদের যেমন সচেতন করা দরকার, তেমনই দরকার অবৈধভাবে শিশুশ্রমিক নিযুক্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া। শিশু যখন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়, তখন শিশু আইনের আওতায় নিয়েই তাকে শুধরোতে হবে।