একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা জরুরি। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। নির্বাচনের পরিবেশ ভয়মুক্ত রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজন। সোমবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তারা না ভোটের বিধান চালু এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণারও পরামর্শ দেন। নির্বাচন কমিশন সামগ্রিক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ এবং দেশের বিশিষ্টজনদের মতকে আমলে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রতিনিধিরা যখন, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন কমিশনের দৃঢ় ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সাহসের ওপর; তা অত্যন্ত জরুরিও। এছাড়া কমিশনকে জনগণের ও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। যা আমলে নেয়া আবশ্যক। ফলে আলোচনায় আসা বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইসি, দেশের বিশিষ্টজনকে মতামত বিশ্লেষণসাপেক্ষে উদ্যোগী হবে এমনটি কাম্য। এ সংলাপে দেশের সুশীল সমাজের শীর্ষস্থানীয় ৫৯ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেন ৩৪ জন। যদিও অনুপস্থিতদের কেউ কেউ লিখিত অভিমত কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর পরেও লিখিত প্রস্তাব কেউ পাঠালে কমিশন তা গ্রহণ করবে।
যখন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির ধারাবাহিক সংলাপের এ প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হলো তখন তা নিশ্চিতভাবেই ইতিবাচক। এছাড়া এরপর গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নারী সমাজের প্রতিনিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সাথেও সংলাপ করবে কমিশন। ফলে নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নিধারণসহ ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ নিয়ে সংলাপে মতামত তুলে ধরার যে আহ্বান জানানো হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে আমন্ত্রিতদের মত গ্রহণ এবং বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, ইসি যদি একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে, তা হবে দেশ ও মানুষের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
বিগত দিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি গত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কারচুপির অভিযোগ, কেন্দ্র দখল, প্রভাববিস্তার করার চেষ্টাসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে নানা ধরনের প্রশ্ন সামনে এসেছে। অথচ এটা নিশ্চিত যে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ধরনের পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুধু প্রতিবন্ধকই নয় বরং এর মাধ্যমে সার্বিকভাবেই নেতিবাচক চিত্র পরিলক্ষিত হয়, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ফলে অতীতের এসব বিষয় বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমলে নেবে এবং নির্বাচনে কেউই যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণেও হবে দ্বিধাহীন। এবারের সংলাপে সেনাবাহিনী মোতায়েন, না ভোটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েই দেশের বিশিষ্টজনরা মত দিয়েছেন এবং আগামী দিনেও যেহেতু সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত যে, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ইসি কোনো প্রকার ছাড় দেবে না এবং সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও অবিচল থাকবে। এবারের অনুষ্ঠিত সংলাপে যেমন উঠে এসেছে, অভিযোগ গ্রহণ ও দ্রুত প্রতিকারে কমিশনের সামর্থ্য বাড়ানোর বিষয়টি, তেমনিভাবে বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশিষ্টজনরা মত দিয়েছেন। ফলে এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং এটা মনে রাখা দরকার, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সবার আস্থা অর্জনে দৃঢ় স্বাধীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সামগ্রিকভাবে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি অবাধ গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনই কাম্য, আর তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।