গাংনী প্রতিনিধি: বিয়ের দাবিতে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাড়াডোব পোড়াপাড়া গ্রামে প্রেমিকের বাড়িতে উঠেছেন রিনা খাতুন নামের এক প্রেমিকা। এ নিয়ে উভয় পরিবারের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন সেখনে। নানা জনের নানা কু-মন্তব্যে মুখরোচক সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রেমিকা রিনা খাতুন সাহারবাটি গ্রামের জামাল উদ্দীনের মেয়ে। সে গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রেমিকের নাম আব্দুল্লাহ। সে পোড়াপাড়া গ্রামের কৃষক খবির উদ্দীনের ছেলে। এইচএসসি পাশের পর লেখাপড়া বন্ধ করে বিদেশ যাওয়ার আশায় রয়েছেন।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে আকস্মিক আব্দুল্লাহর বাড়ির সামনে হাজির হয়েছিলেন রিনা খাতুন। আব্দুল্লাহর সাথে বিয়ের দাবিতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নেয় আব্দুল্লাহ। কিন্তু ওই বাড়িতে প্রবেশের সিদ্ধান্তে অনড় রিনা। এ নিয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বাগবিত-া শুরু হয়। এক পর্যায়ে বাড়ির ভেতরে অবস্থান নেয় রিনা। উভয় পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা চলছিলো। রিনা বাড়ির ভেতরে থাকলেও তার পরিবার ও পক্ষের কিছু মানুষ বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করে বিয়ে করতে অসম্মতি জানায় আব্দুল্লাহ। স্থানীয় সমাজপতিসহ উভয় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই সমাধান হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় মেয়েকে রেখেই বাড়ি ফিরে যায় প্রেমিকার পরিবারের লোকজন।
রিনা জানায়, ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর সাহারবাটি বাজারে সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং নেয় আব্দুল্লাহ। এ সুবাদে তাদের সাথে পরিচয় ও প্রেম। যা আব্দুল্লাহর পরিবারের সবাই জানতেন। আব্দুল্লাহর দুলাভাইয়ের মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে রিনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে আব্দুল্লাহ। বিয়ের জন্য সে ৩ বছর অপেক্ষা করছে। গত কয়েকদিন থেকে রিনার সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাই বিয়ের দাবিতে সে আব্দুল্লাহর বাড়িতে অবস্থান নেয়। আব্দুল্লাহর সাথে মোবাইলে সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই কথা বলার প্রমাণাদি উপস্থাপন করে রিনা।
তবে রিনার অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল্লাহ জানায়, তার সাথে অনেক আগে থেকে যোগাযোগ নেই। আমি বেকার তাই বিয়ে করতে রাজি হয়নি।
এদিকে ওই বাড়িতে রিনার অবস্থানের পর এলাকার শ’ শ’ উৎসুক মানুষ ভিড় করে। উপস্থিত মানুষের নানাবিধ সমালোচনায় বেকায়দায় পড়েন আব্দুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা। লোকলজ্জার ভয়ে ভীত আব্দুল্লাহর মা ও বোন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জানতে চাইলে আব্দুল্লার মা হাসিনা খাতুন বলেন, যে মেয়ে জোরপূর্বক বাড়িতে অবস্থান নিতে পারে তাকে নিয়ে কীভাবে সংসার করবো। সংসার মানে তো সম্প্রতি। তাছাড়া বেকার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে তাদের ভরণ-পোষণ কে করবে? এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে তা কোনোভাবেই তিনি আচ করতে পারেননি বলেও দাবি করেন।
এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত স্থানীয় মাতবরদের সমঝোতা চেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যার দিকে রিনার পক্ষের লোকজন তাকে রেখেই বাড়ি ফিরে যায়। বিয়ের বিষয়ে তারা হাল ছেড়ে দেয়। রাতে আব্দুল্লাহর পিতা ছেলের বিয়ের জন্য মত প্রকাশ করেন। রাতেই আব্দুল্লাহ ও রিনার বিয়ে দেয়ার জন্য মেহেরপুর শহরের এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের (কাজি) কাছে পাঠিয়ে দেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিয়ের প্রক্রিয়া চলছিলো।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ছেলে ও মেয়ের পক্ষের লোকজনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষ লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ কিংবা মামলা পেলেই প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।