মিল মালিকদের দাবি- নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে প্রতিকেজি চালের দাম দশ টাকা বেশি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের লক্ষে ২০৯ জন মিলারের মধ্যে ১৪২ জন চুক্তিবদ্ধ হলেও এখন পর্যন্ত ১ কেজি চালও কেউ সরবরাহ করেননি। আগামী ৩১ আগষ্টের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় মোট তিন হাজার ৯শ ১৩ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহ করার কথা। বাজার ছাড়া সরকারি মূল্য কম হওয়ায় মিলমালিকরা সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে সরবরাহ করতে আগ্রহী নন। ফলে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
২ মে থেকে বোর ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। ধানের সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ টাকা ও চালের মূল্য ৩৪ টাকা কেজি। বিধি মোতাবেক সকল মিল মালিকেরই চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা। চুয়াডাঙ্গায় মোট ২শ ৯ টি মিল রয়েছে। এদের মধ্যে ১৪২ জন চুক্তিবদ্ধ হলেও গত এক মাসে এক ছটাক চালও সরবরাহ করেননি। এদের মোট ৯৬২ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার কথা। মিল মালিকদের সাথে যোগাযাগ করা হলে তাদের অধিকাংশই বলেছেন, নির্ধারিত সময় ৩১ আগস্ট। এর মধ্যেই সরবরাহ সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে ধান চাল সংগ্রহের মূল দায়িত্বে নিয়োজিত চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল ওয়াহিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, চুক্তি সম্পাদনের পরও যারা চাল সরবরাহ করবেন না, বা ব্যার্থ হবেন তাদেরকে আসন্ন ২০১৭-১৮ মরসুম থেকে দুটি মরসুমে তাদেরকে চুক্তি থেকে বাদ রাখা হবে। আর যে মিল মালিকেরা চলতি বোর মরসুমে চাল সরবরাহের চুক্তিবদ্ধ হননি তাদেরকে আগামী আমন মরসুম থেকে ৪ মরসুম চুক্তির বাইরে রাখা হবে। এবার এখন পর্যন্ত অবশ্য ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় নির্ধারণ করেনি।
প্রতিবছরেই খাদ্য অধিদফতরের অধীনে সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্যে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে মিল মালিকদের নিকট থেকে চাল সংগ্রহ করে। এবারও বোর মরসুমে চাল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২ মে থেকে। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯শ ১৩ মেট্রিকটন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদরে ১২শ ৬৫, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭শ ১৮, দামুড়হুদায় ৪শ ৪৯ ও জীবননগরে ১৪শ ৮১ মেট্রিকটন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় তালিকাভুক্ত মিলার রয়েছে ৭২। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৫৫। এদের ৪শ ৩১ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করার কথা। আলমডাঙ্গা উপজেলায় তালিকাভুক্ত মিলার রয়েছেন ৪৪। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৩৯। এদের ১শ ৯৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার কথা। দামুড়হুদা উপজেলায় মোট মিলার রয়েছেন ২৮। এদের মধ্যে ১৭ চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এদের ১শ ১২ দশমিক ৪৩১ মেট্রিকট চাল সরবরাহ করার কথা। জীবননগর উপজেলায় মোট মিলার রয়েছেন ৬৫ জন। চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৩১ জন। এদের ২শ ২৪ দশমিক ৬৯০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করার কথা। এক মাস আগে চাল সংগ্রহ আভিযান শুরু হলেও কেনো এখনও কেউ একছটাকও সরবরাহ করেননি? এ প্রশ্নের জবাব জানতে চাওয়া হলে জেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি সরোজগঞ্জের হাজি মো. আব্দুল্লাহ শেখ বলেছেন, আমরা যারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি তাদের লোকসান গুণতে হবে। লোকসানের মাত্রা কমে কি-না তা দেখার জন্যই মূলত চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকরা অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে চাল ৩৪ টাকা, ধান ২৪ টাকা কেজি। অথচ বাজারে বর্তমানে চালের দাম ৪৪ টাকা, ধানের দাম ২৬ টাকা কেজি। আমি ৪০ মেট্রিকটন চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ওই চাল সরবরাহ করা হলে কমপক্ষে ৪ লাখ টাকা লোকশান গুণতে হবে। সে কারণেই আমরা মূলত চালের মূল্য কমে কি-না তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।