শাহেদুজ্জামান টরিককে বিরোচিত সম্মাননা দিলো চুয়াডাঙ্গা চেম্বার

আবেগঘন স্মৃতিচারণ : দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান

 

স্টাফ রিপোর্টার: ‘সফলতার শুরুটা হলো স্বপ্ন বা লক্ষ্য নির্ধারণ। লক্ষ্যে পৌঁছুতে দরকার পরিকল্পিত পরিশ্রম। ইচ্ছে ও ইচ্ছেপূরণের দূরত্ব ঘোচাতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। বয়স ভেদে স্বপ্নেরও রকমফের ছিলো। প্রথমটা ভালো ছাত্র হওয়া, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। তার পর কর্মজীবনে সাফল্য অর্জন করা। পেরিছি বোধ হয়।’

DSC02267

‌                সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি সাহেদুজ্জামান টরিক উপরোক্ত মন্তব্য করে বলেছেন, নিজের ভোগ বিলাসে কিছুটা ছাড় দিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে সমাজ সুন্দর হতে বাধ্য। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’র পক্ষে সম্মাননা প্রদানকালে সফল ব্যবসায়ী সাহেদুজ্জামান টরিক স্মৃতিচারণে ফিরে যান। তিনি তার পিতার অবদানের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুতও হয়ে পড়েন। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ৪ ভাই দু বোনকে আমাদের পিতা অন্যকে শ্রদ্ধা জানাতেই শুধু শেখাননি, সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথা বলতেন। পদে পদে পিতার কথা মনে পড়ে। কারণ অন্যকে সহযোগিতা করে, উপকার করে নিজের অর্থ কমে না, বরঞ্চ বাড়ে।

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিকের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাজস্ট্রিজের পরিচালক শাহারিন হক মালিক, মঞ্জুরুল আলম লার্জ ও সালাউদ্দীন মিঠু। পরিচালকদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কিশোর কুমার আগরওয়ালা, রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, খুসতার জামিল, নীল রতন সাহা, সুরেশ কুমার আগরওয়ালা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদুল হক জোয়ার্দ্দার লেমন, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান মিজাইল, জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, হোটেল মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরিফুজ্জামান আরিফ, আত্মবিশ্বাসের নির্বাহী পরিচালক আকরামুল হক বিশ্বাস, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মামুন-অর-রশীদ আঙ্গুর, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোতালেব হোসেন, নিউ মার্কেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রোকনুজ্জামান রোকন, সাবু মিয়াসহ চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সাংবাদিক সুধীসহ সাহেদুজ্জামান টরিকের বন্ধুমহল। উপস্থাপনায় ছিলেন চেম্বার পরিচালক নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার। শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন পরিচালক হারুন অর রশিদ।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি সাহেদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টরিক। তিনি সিঙ্গাপুরে প্রথম পাড়ি জমানোর সময় বেশ কয়েকজনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণ করেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহম্মদ অন্যতম। তিনি বলেন, পিতা নিজের গ্রামে নিজের জমির ওপর মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সময় তিনি সিঙ্গাপুরে গেলেন। মাদরাসার জন্য টাকা দিতে বললেন। তখন যে টাকা তিনি দাবি করেছিলেন তা বর্তমানে আমার কাছে সামান্য টাকা বলে মনে হলেও সেদিন ছিলো ওটাই পূজি। ওটাই পিতার হাতে তুলে দিলাম। পিতা দোয়া করলেন। বললেন, মাদরাসার জন্য টাকা দিয়ে মনে কষ্ট নিও না, সিঙ্গাপুরে তোমার ২০টা বাড়ি হবে। সত্যিই হয়েছে। ২০টি ফ্লাট, গাড়ি, ড্রাইভারসহ অনেক কিছুই রয়েছে। যে বাড়িতে থাকি তার দাম ২২ কোটি, যে গাড়িতে চড়ি তার দাম সাড়ে ৭ কোটি। আর প্রতিমাসে ড্রাইভারকে বেতন দিই ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ সিঙ্গাপুরে বসে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পড়ে দেশের কিছু বিষয় জেনে বুক ফেটে কান্না আসে। যেদিন চাঁদপুর ও বরিশাল থেকে আমার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বড় বড় ইলিশ পাঠিয়েছে আমার পরিচিতরা, তার একদিন পরই দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় পড়লাম, ইলিশ মাছ খেতে না পেয়ে মায়ের ওপর অভিমান করে ৪র্থ শ্রেণির এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। এ কষ্টটা মুছবো কীভাবে? ওই ইলিশ কি খাওয়া যায়? সিঙ্গাপুরে বসে ওই ইলিশ আর খেতে পারিনি।

সাহেদুজ্জামান টরিক বলেন, পিতা যে মাদরাসা গড়ে গেছেন সেখানে বর্তমানে প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী। তাদের অন্নবস্ত্রের ব্যবস্থা করার সুযোগ হয়েছে। আমি আমার মতো করে যাচ্ছি। আপনারাও সমাজের পিছিয়ে পড়াদের পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে দাঁড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস। আগ্রহ আছে, সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, মেধা আছে কিন্তু পড়া-লেখার সামর্থ্য নেই, সমাজের এমন মানুষদেরকে আপনারা সহযোগিতা করবেন। নিজের বিলাসিতা থেকে একটু বিয়োগ করে অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে পারলেই আমরা প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারবো।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেয়র রিয়াজুল ইসলাম টোটন বক্তব্য দিতে গিয়ে সাহেদুজ্জামান টরিকের নানাদিক তুলে ধরে প্রশংসা করেন। এক পর্যায়ে তিনি বেশ কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে কীভাবে অর্থ দিয়ে, ছায়া দিয়ে অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করছেন তারও খণ্ডবিশেষ বর্ণনা দেন। তার অর্থে বর্তমানে ৪ জন মেয়ে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করছে। প্রত্যেকেরই প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। দিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মতো আরো অনেকেই আছেন। সকলে এভাবে দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে তুলে নিলে সমাজে অবহেলিত কেউ থাকবে না। মেধাবী তার মেধা বিকাশে সুযোগ পাবে।

সাহেদুজ্জামান টরিককে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য পদ দেয়া হয়। সম্মাননা ক্রেষ্ট উপহার দেয়ার পাশাপাশি ফুল ও ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধিত করেন চেম্বার পরিচালকরা। সাহেদুজ্জামান টরিক চেম্বারের উন্নয়নে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।