প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: পুণ্যাহ মাহে রমজানের রহমতের দশকের আজ চতুর্থ দিন। রমজান মাস আল্লাহর কাছে আমল কবুলের মাস। কিন্তু শর্ত হলো আমলটি অবশ্যই সুন্দর হতে হবে। কোনো জিনিস গ্রহণযোগ্যতার পূর্বশর্ত হলো তা সুন্দর, ত্রুটিমুক্ত ও পরিপূর্ণ হওয়া। আমাদের রোজা যদি সহীহ ও সুন্দর না হয় তাহলে আল্লাহপাক তা গ্রহণ করবেন না এবং তার পরিপূর্ণ বদলা দেবেন না। হাদিসে আছে, অনেক রোজাদার এমন আছে যারা রোজার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না, আর এমন রাত্রি জাগরণকারী আছে যারা রাত্রি জাগরণের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পায় না (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, হাকিম)। কারণ তাদের রোজা শুদ্ধ হয় না। এজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ও মেহনত করা দরকার যাতে আমাদের রোজাগুলো সুন্দর হয়। ওলামা ও মাশায়েখগণ কোরআন হাদিসের আলোকে রোজা শুদ্ধ হওয়ার ছয়টি আদব বা নিয়ম বর্ণনা করেছেন। এক. দৃষ্টির হেফাজত করা। যেন কোনো নাজায়েজ জায়গায় দৃষ্টি না পড়ে। এমনকি নিজ স্ত্রীর প্রতিও যেন কামভাব ও খাহেশাতের দৃষ্টি না পড়ে। বেগানা মহিলার তো প্রশ্নই ওঠে না। দুই. জবানের হেফাজত করা। মিথ্যা, গীবত, শেকায়েত, চুগলখোরী, বেহুদা কথাবার্তা, ঠাট্রা-বিদ্রুপ, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। তিন. কানের হেফাজত। যে জিনিস মুখে বলা নাজায়েজ তা শুনাও নাজায়েজ। গান-বাজনা, আজেবাজে কথা শ্রবণ, গীবতে কান দেয়া সবই এর অন্তর্গত। চার. শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গকে নাজায়েজ কাজ থেকে হেফাজত করা। যেমন হাতকে নাজায়েজ বস্তু ধরা হতে, পা কে নাজায়েজ জায়গায় যাওয়া হতে, দেমাগকে অশ্লীল চিন্তা হতে, পেটকে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করা থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি। পাঁচ. হালাল মাল দ্বারাও এতো বেশি ইফতার না করা যাতে পেট একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কেননা এতে রোজার উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়। ছয়. রোজা রাখার পরও মনে মনে এই ভয় রাখা যে, নাজানি আমার রোজা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কি-না। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে এই মহিমান্বিত মাসে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি যাতে তিনি আমাদেরকে রোজার সমস্ত আদব রক্ষা করে রোজা রাখার তওফিক দান করেন এবং তার অপার মেহেরবানি দ্বারা আমাদের রোজাগুলোকে সহীহরূপে কবুল করে নেন। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।