নব্য জেএমবির দুই জঙ্গি নিহত : বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার

ঝিনাইদহের লেবুতলায় মহেশেপুরে বজরাপুরে আস্তানায় পুলিশের অভিযান

মহেশপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর হঠাৎপাড়া গ্রামের ‘জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নব্য জেএমবির দুই ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছেন। তবে বজরাপুরে নিহত দুজনের একজনের নাম তুহিন। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। এ ঘটনায় বোমার স্প্রিন্টারে আহত হয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম ও এসআই মহসিন বলে জানিয়েছেন মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদুল কবীর। অভিযানকে কেন্দ্র করে সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানার আশপাশের এলাকায় গতকাল সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। একপর্যায়ে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ ঘটনাস্থলে যান।

অভিযানকালে বাড়ির মালিক জহুরুল ইসলাম ও ছেলে জসিম উদ্দীনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের শরাফৎ হোসেনের বাড়িতে পৃথক আরেক দফা অভিযানে তার ছেলে শামিমকে আটক করা হয়েছে। ওই বাড়ি থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও ৮টি তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। শরাফতের বাড়িতে আটক শামিমের বন্ধু হাসান নামে এক যুবক থাকলেও তার হদিস মিলছে না।

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, মহেশপুরের বজরাপুরে নব্য জেএমবির আস্তানাটিতে সকালে অভিযান শুরু করলে ভেতর থেকে জঙ্গিরা বোমা ও গুলি ছুড়েতে থাকে। এসময় এক জঙ্গী শরীরে বোমা বেঁধে পুলিশের দিকে দৌড়ে আসতে খাকলে পাল্টা গুলিতে তিনি নিহত হন। এর আগে গত শনিবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের মৃত শরাফত আলী মণ্ডলের বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহ পুলিশ ঘেরাও করে রাখে। পরে সেখান থেকে ৮টি বোমা ও একটি নাইন এমএম পিস্তল উদ্ধার করে। ওই আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয় জঙ্গি শামীমকে। এই শামীমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বজরাপুরে অভিযান চালানো হয়।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা ভোর সাড়ে ৩টার দিকে বজরাপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। পরে সেখানে অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিরা বাধা দেয়।

খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ জানান, নব্য জেএমবি’র আস্তানাটিতে সকালে অভিযান শুরু করলে ভেতর থেকে জঙ্গিরা বোমা ও গুলি ছুঁড়তে থাকে। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক জঙ্গি নিহত হয়। এসময় ঘরের ভেতরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরো এক জঙ্গি আত্মঘাতি হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত শামীমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল ভোরে মহেশপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, শামীম নব্য জেএমবির সদস্য। হলি আর্টিজানের হামলাকারী নিব্রাসসহ বেশ কয়েকজন জঙ্গি ঝিনাইদহে অবস্থানকালে তাদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতো শামীম। সে জেএমবির সদস্য ছিলো, পরে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। বর্তমানে সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমান জানান, পাশ্ববর্তী এলাকায় জানমালের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২শ’ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ফলে ঘটনার আশপাশে মিডিয়া কর্মী বা সাধরণ মানুষ যেতে পারছে না। এর আগে গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনিপাড়ার ‘জঙ্গি’ আব্দুল্লাহ ওরফে প্রভাত ওরফে বেড়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ি থেকে ২০ ড্রাম রাসায়নিক দ্রব্য, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক ডিভাইস, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি, একটি মোটরসাইকেল ও বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে। পরে চাপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গী আব্দুল্লাহ নিহত হন বলে এলাকায় প্রচার হয়।

জহুরুল ইসলামের প্রতিবেশী রেজাউল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে জহুরুল ইসলাম বজরাপুরে এসে বাড়ি করে বসবাস শুরু বরে। মিষ্টি খাজা তৈরি করে বিক্রি করতো। বর্তমানে তাকে কোনো কাজকর্ম করতে দেখা যেত না। তার সাথে প্রতিবেশী কারো সম্পর্ক ছিলো না। তার বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেয়া হতো না। মাস তিনেক আগে তার বাড়িতে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েক জন এসে থাকতে শুরু করে। তারা কারা তা প্রতিবেশীরা বলতে পারেননি। তবে তাদের একজন খালিশপুর বাজারে একটি স’ মিলে এবং অপরজন খাম্বা তৈরির কারখানায় কাজ করতো বলে জানা গেছে।

অপর এক প্রতিবেশী শাহাজুল ইসলাম বলেন, জহুরুল ইসলাম গ্রামে বসবাস করলেও গ্রামের লোকের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিলো না। ওই বাড়ির মেয়েরাও কারো সাথে কথা বলতো না।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই আস্তানা থেকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক ভর্তি ২০টি ড্রাম, একটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স বোরের পিস্তল, একটা ম্যাগাজিন ও ৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।