নিরাপত্তাহীনতা আর বিশ্বাসঘাতকতার পারস্পরিক অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: মাত্র এক মাস আগেই এক টেলিফোন সাক্ষাত্কারে অপু বিশ্বাস বলেছিলেন, আমি অন্তরালে থাকলে কি হবে; হঠাত করেই এমন খবর হয়ে আসবো যে, সব মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে।’ ঠিক তাই করলেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তবে এভাবে হঠাত টিভি লাইভে এসে সবাইকে হকচকিয়ে দেবেন তা মোটেই প্রত্যাশিত ছিলো না। দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পর সশরীরে সামনে এলেন অপু বিশ্বাস। জানালেন শাকিবের সাথে তার বিয়ের খবর। গতকাল অপু বলেন, ‘২০০৮ সালে ১৮ এপ্রিল আমাদের বিয়ে হয়েছে। শাকিবের ঢাকার বাসায় এই বিয়ে হয়। পরিবারের কাছের লোকজন সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের সময় আমার নাম হয় অপু ইসলাম খান। শাকিবের ইচ্ছাতেই এতোদিন বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। অপু বলেন, শাকিবের ভালো চিন্তা করে এতদিন চুপ করেছিলাম। অনেক ছাড় দিয়েছি। ধৈর্য ধরতে ধরতে শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছি। কারণ, সে আমাকে সবসময় ছোট করেছে। অনেক লাঞ্ছনা সহ্য করেছি। কিন্তু আর সইতে পারলাম না। তাই টিভি লাইভের মাধ্যমেই সারাদেশকে জানিয়ে দিলাম। কারণ এ সত্য প্রকাশটা আমার জন্য নয়, আমার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য।’
অপু বিশ্বাস বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর শাকিব আমাকে বলেছিলো নিজেকে লুকিয়ে রাখতে। তাই লুকিয়েছিলাম। কিন্তু সন্তান হওয়ার সময় শাকিব আমার পাশে ছিলো না। তবে ঢাকায় আসার পর সন্তানকে দেখতে আসে। সন্তানের সব খরচও দেয়। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল রাতেও সে আমার সাথে দেখা করেছে। বাচ্চাকে আদর করেছে। এতোদিন এসব খবর আড়াল রাখার প্রসাথে অপু বলেন, শাকিবের ক্যারিয়ার এখন তুঙ্গে। সে আমার স্বামী। এসব কথা জানাজানি হয়ে গেলে তার সম্মানহানি হবে, ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে, তাই চুপ করে ছিলাম। কিন্তু সে এখন যেটা করছে সেটা অন্যায়। আমাকে আমার যোগ্য সম্মানটা দিচ্ছে না। একটা মেয়ের জীবনে এর চেয়ে অপমানের আর কী হতে পারে? রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের ৮ বছরের মাথায় অপু বিশ্বাসের কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে এক পূত্র সন্তান। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার এক ক্লিনিকে জন্ম হয় শাকিব ও অপুর সন্তানের। এ সন্তানের নাম রাখা হয় আব্রাহাম খান জয়। সন্তান জন্মের সময় ছবির শুটিংয়ের ব্যস্ততা থাকায় পাশে থাকতে পারেননি শাকিব। এছাড়া এক বছর শাকিবের সাথে তার কথা হয়নি বলেও জানিয়েছেন লাইভে। অপু বলেন, সম্প্রতি আমাকে ও সন্তানকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন শাকিব। আর সহ্য করতে না পেরে মুখ খুলতে বাধ্য হলাম।
শাকিব খানের কোনো ক্ষতি চান না উল্লেখ করে অপু বিশ্বাস বলেন, তিনি চান শাকিব খান যেন তার ক্যারিয়ারে আরও উন্নতি করেন। পাশাপাশি তার সন্তান যেন পিতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়েও আকুতি জানান অপু বিশ্বাস। শাকিব খানের হাত ধরে নতুন নায়িকা বুবলীকে কখনো নিজের প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ভাবেন না বলে জানান তিনি। অপু বিশ্বাস দাবি করেন, তার ছেড়ে যাওয়া সিনেমাতেই মূলত কাজ করার সুযোগ পায় বুবলি। বুবলী কাজ করছে, করুক মন্তব্য করে তার জন্য শুভকামনা জানান অপু। শিগগিরই কাজে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘কি কি সিনেমা অসমাপ্ত রেখেছিলাম, মনে আছে। সেগুলোর শুটিং শেষ করবো শিগগিরই।
শাকিবের বক্তব্য: শাকিব খান বলেছেন, ‘দেখুন সন্তান আমার। আমি বাবা হয়ে কেন সন্তানকে অস্বীকার করবো। আর এটা সবাই জানেন যে, শো-বিজ ইন্ডাস্ট্রিতে কোটি কোটি টাকা লগ্নি হয়ে আছে আমার একাধিক ছবি নিয়ে। তাই বিষয়টি আমরা সমঝোতার মাধ্যমেই পার করছিলাম। সন্তানের দায়িত্ব আমার সারাজীবনের; কিন্তু অপু বিশ্বাস তার মা হয়ে যে কাজটি করলো, সেটি ঠিক করেনি। কারণ অপু তো নিজেও এই ইন্ডাস্ট্রির অংশীদার। সুতরাং ইন্ডাস্ট্রির লাভ-ক্ষতিও ওর বিবেচনা করা উচিত ছিলো। হলিউড-বলিউডে এটা হরহামেশা ঘটে। অনেক বছর পর তারা সাংসারিক খবর জানায়; কিন্তু আজ এই অবস্থায় টাকার বিনিময়ে লাইভে গিয়ে যে কথাগুলো বললো সেটি সামাজিকভাবে শুধু আমাকে হেয় নয়, গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ছোট করলো। আমি শুনেছি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে লাইভ শোতে সে হাজির হয়েছে; কিন্তু এভাবে আমার সন্তানকে নিয়ে কেন? কারণ আমি সবসময়ই হয়তো অপুর ব্যাপারে লুকোচুরি করেছি ঠিকই; কিন্তু সরাসরি না বলিনি। কারণ আমার কাঁধে এখন একটি নয়, ঢালিউড-টালিউড দুইটি ইন্ডাস্ট্রির দায়ভার। মাত্র ক’দিন আগেই কথা হলো। মাঝে এ করাতেই কী এমন ঘটে গেলো যে আমার বিরুদ্ধে এমন করতে হবে? এর পেছনে অন্য অনেকের কু-পরামর্শ রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে।
বিষয়টি প্রকাশ করার পর শাকিবের সাথে অপুর কথা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘না কোনো কথা হয়নি। তবে আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ এতোদিন নানা মিথ্যে কথা দিয়ে ভুলিয়ে রেখেছিলো আমাকে শাকিব। সেই আমি তো এখন অকপটে সত্যটা বলা শুরু করেছি। তাই আমি আমার ক্যারিয়ার ও আমার দৈনন্দিন জীবন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তবে কোনো আইনি মামলায় যাবেন কি-না জানতে চাইলে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি তো স্ত্রী হিসেবে আমার এবং আমার সন্তানের মর্যাদা ফিরে চাইতে আবেদন জানিয়েছি। এখন এ অধিকার স্বীকার না করলে সমাজ বা আমার অভিভাবকেরা যা বলবেন, আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো। কখন একটি মেয়ে এভাবে নিজের ব্যক্তিগত কষ্টের কথা মিডিয়াতে বলতে আসে– আপনারাই বলুন?
শাকিব খানকে তার সিদ্ধান্ত কি হবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের দায়িত্ব আমি বাবা হয়ে সবসময়ই নিয়েছি, এখনো নেবো; কিন্তু স্ত্রী হিসেবে অপু আমার সম্মান রাখেনি। অপু আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই শো-বিজ ইন্ডাস্ট্রির সাথেও বেইমানি করেছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের পারস্পরিক শ্রদ্ধা তো সে নিজেই নষ্ট করলো! এখন দেখা যাক অপুর আর কি কি নাটক বাকি আছে। কারণ আমার এসব কিছু ছাপিয়ে ৬টি ছবির কাজও ঠিক সময়ে শেষ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি আজ অপুকে ‘অপু বিশ্বাস বানিয়েছে, আমাকে শাকিব খান বানিয়েছে। তাই আমি এর সাথে বেইমানি করতে পারি না।’