ময়নাতদন্তের জন্য জোসনার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ : স্বপন বিশ্বাস চিকিৎসার নামে নির্যাতন করেননি বলে দাবি তুলে জানিয়েছেন প্রতিবাদ
স্টাফ রিপোর্টার: জন্ডিস আক্রান্ত রোগীকে জিনে ধরেছে দাব তুলে চিকিৎসার নামে নির্যাতনের পর মৃত্যু নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে আলমডাঙ্গার পল্লি খাসকররা এলাকায়। প্রভাবশালী মহল বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করলেও পুলিশ বিতর্ক এড়াতে মৃতদেহ ময়নতদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে জোছনা বেগমের মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতারমর্গে নেয়া হয়েছে। অপরদিকে অভিয়ুক্ত কবিরাজ স্বপন বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করে বলেছেন, আমার কারণে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এদিকে পুলিশ সূত্র বলেছে, অভিযুক্ত কবিরাজকে খোঁজা হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত কেউ বাদী হয়ে মামলা করেননি।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা গ্রামের ছাত্তার আলীর স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী জোছনা বেগম মাস ছয়েক আগে জন্ডিসে আক্রান্ত হন। ওই সময় ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তার মাথার চুল উঠে যায়। এরপর থেকেই স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন জোছনা বেগমের ওপর মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার জোছনা বেগম জ্বরে আক্রান্ত হন। এ কারণে তার গায়ে জিন ভর করেছে বলে প্রচার করতে থাকে স্বামী ছাত্তারসহ পরিবারের লোকজন। ওই দিন রাত ৯টার দিকে পার্শ্ববর্তী নিশ্চিন্দীপুরের সামসুল হুদা কবিরাজের ছেলে কথিত কবিরাজ যুবক স্বপনকে বাড়িতে ডাকা হয়। স্বপন জিন তাড়ানোর নামে জোছনা বেগমের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। জোছনার আর্তচিৎকার শুনেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসে না। এভাবে জিন তাড়ানোর নামে স্বামী ও পরিবারের লোকজনের সামনে জোছনার ওপর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে নির্যাতন। শেষে একটি পানি বোঝাই ঘড়া মুখে চেপে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন কথিত কবিরাজ। এ কাজ জোছনা না পারলে কবিরাজ ঘড়ার সাথে জোছনার মুখ চেপে ধরেন। এ সময় অজ্ঞান হয়ে জোছনা নেতিয়ে পড়েন। অবস্থা বেগতিক বুঝে কবিরাজ স্বপন সটকে পড়েন। যাওয়ার সময় তিনি বলে যান ‘জোছনাকে প্যাঁচট জিনে ধরেছে। সহজে যাবে না।’ পরবর্তীতে মুমূর্ষু অবস্থায় জোছনাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতে শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় জোছনাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শনিবার সন্ধ্যারাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রোববার সকালে জোছনার লাশ তড়িঘড়ি দাফন দেয়ার চেষ্টা চলে। এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মারধর করা হয়। এ সময় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জিন তাড়ানোর নামে কবিরাজের নির্যাতন, গৃহবধূর মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নিশ্চিন্তপুরের শামসুল হুদা বিশ্বাসের ছেলে স্বপন বিশ্বাস। তিনি বলেছেন, আমি কবিরাজি করি না। গ্রামের কিছু কুচক্রি আমার সম্মান ক্ষুণœ করার জন্য এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ পত্রিকায় সবরাহ করেছে। ফলে আমি ওই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।