অভিযান চলছে জঙ্গি আস্তানায় : আতিয়া মহলে ৪ জঙ্গির মরদেহ

স্টাফ রিপোর্টার: তিন দিনের সেনা অভিযানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল; সেখানে চারটি মরদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। আতিয়া মহল নামে পাঁচ তলা ওই ভবনের কাছে পাঠানপাড়া মসজিদের কাছে সোমবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে অপারেশন টোয়াইলাইটের সর্বশেষ অবস্থা জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফখরুল আহসান। ওই বাড়িতে তিন পুরুষ ও এক নারী জঙ্গি থাকার তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, তারা যে চারটি লাশ পেয়েছেন, তার মধ্যেও তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। ভেতরে অবস্থানরত সম্ভাব্য সব জঙ্গি নিহত হলেও তারা বাড়িটিতে ব্যাপক বিস্ফোরক মজুদ করে রেখেছিলো জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, অভিযান এখনো শেষ হয়নি।

পুলিশ ও র‌্যাব ঘিরে রাখার একদিন পর গত শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অভিযান শুরুর পর ব্রিগেডিয়ার ফখরুলই প্রতিদিন নিয়মিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করে আসছেন। সোমবার সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়েই তিনি অভিযান প্রায় শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, দুঃসাহসিক অভিযানের জন্য আমরা সবাই গর্বিত। আপনারও গর্ববোধ করতে পারেন। দেশবাসীর দোয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই খুব সুন্দর, সফলভাবে অভিযানটা চলেছে।

পাঁচ তলা ওই ভবনের নিচ তলায় চারটি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের যে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছিলাম, মোটামুটি তথ্য ছিলো যে, এখানে চারজন জঙ্গি আছে। এটাও তথ্য ছিলো যে, তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। যে ডেডবডি আমরা পেয়েছি তার মধ্যে তিনজন পুরুষ, একজন মহিলা।’ দুটি লাশ পুলিশের কাছে তুলে দেয়া হলেও বাকি দুটি এখনো ওই বাড়ির ভেতরেই রয়েছে। ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, বাকি দুটো ডেডবডির মধ্যে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো আছে। যে অবস্থায় আছে, তাদের ওইখান থেকে বের করাটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এই ডেডবডিগুলো কিভাবে বের করবো, সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করছি। আগের দিনই দুই জঙ্গির নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়। এই আস্তানায় জঙ্গিদের শীর্ষ কোনো নেতা থাকতে পারেন বলে ধারণার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও জানিয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে তেমন কেউ রয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে সেনা কর্মকর্তা ফখরুল বলেন, তা পুলিশ ও র‌্যাব দেখে নিশ্চিত করতে পারবে। তবে তিনি বলেন, যে চারজন এখানে ছিলো, তারা ওয়েল ট্রেইন্ডড। তাদেরকে খুঁজে বের করে যে নিষ্ক্রিয় করা হলো বা হত্যা করা হলো, তা সেনাবাহিনীর জন্য বিশাল বড় সফলতা। চারজনের বাইরে আর কারও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে কি-না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারজনের বিষয়ে আমরা জানতাম, চারটা ডেডবডি আমরা পেয়েছি। যতোটুকু ধারণা হচ্ছে, এখানে জীবিত আর কেউ নেই। তবে কেউ হঠাৎ করে থেকেও যেতে পারে।

ওই বাড়িটির নানা স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে জঙ্গিরা তা দুর্গম করে তুলেছিলো বলে আগের দিনই জানিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার ফখরুল। সেজন্য অভিযানটি ঝুঁকিপূর্ণও বলেছিলেন তিনি। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, সার্বিক যে অবস্থাটা দেখলাম, যে একটা রুমের ভেতরে একটা ডেডবটি, তার পাশেই ছড়ানো ছিটানো আইইডি লাগানো রয়েছে। পুরো বিল্ডিংটায় যে পরিমাণ এক্সপ্লোসিভ আছে এগুলো যদি বিস্ফোরণ হয় তাহলে এই বিল্ডিঙের অংশবিশেষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। যে অবস্থায় আছে, এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এবং সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে। অভিযান শেষ হয়নি জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার ফখরুল বলেন, এই অপারেশনে আরও হয়তো কিছু সময় লাগতে পারে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বাকি কাজটুকু এগিয়ে নিয়ে যাবো। অভিযান শেষে উস্তার আলীর মালিকানাধীন এই বাড়িটি সেনাবাহিনী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা।

Leave a comment