চুয়াডাঙ্গার বোয়ালিয়ায় স্ত্রীকে গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টায় স্বামী গ্রেফতার

চুয়াডাঙ্গার বোয়ালিয়ায় স্বামীর ধরিয়ে দেয়া আগুনে ঝলসানো স্ত্রী লিমার জীবন সঙ্কটাপন্ন : ঘটনার ১৩ দিন পর অভিযুক্ত স্বামী নাজমুল গ্রেফতার

বেগমপুর প্রতিনিধি: ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বোয়ালিয়া গ্রামে স্বামীর ধরিয়ে দেয়া আগুনে ঝলসানো লিমা আক্তার অন্তরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, লিমার জীবন সঙ্কটাপন্ন। বার্ন ইউনিটে যত রোগী ভর্তি আছে তার মধ্যে লিমার অবস্থা দিন দিন অবনতিই হচ্ছে। এদিকে ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় অভিযুক্ত স্বামী নাজমুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাকৃত নাজমুলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া মাদরাসাপাড়ার আলম আলীর মেয়ে লিমা আক্তার অন্তরার আনুমানিক ৬ বছর আগে বিয়ে হয় নেহালপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বটতলা পাড়ার সানোয়ার মল্লিকের ছেলে ইজিবাইক চালক নাজমুল মল্লিকের সাথে। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে জন্ম নেই একটি ছেলে সন্তান আবির। যার বয়স এখন আড়াই বছর। ভালোই চলছিলো নাজমুল লিমার সংসার। বিয়ের আগে নাজমুলের সাথে তার মামি সোনালীর অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো। বিয়ের পর তা জেনেও মেনে নেয় লিমা। এদিকে মেয়ের সুখের কথা ভেবে শত কষ্টের মাঝেও জামাই নাজমুলকে মোটরসাইকেল এবং ইজিবাইক কিনে দেন লিমার পিতা। তাতেও মন গলে না নাজমুলের। গত কয়েক মাস ধরে আবারও সেই মামি সোনালীর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে নাজমুল। এনিয়ে সংসারে অশান্তি দানা বাধে। শতচেষ্টা করেও নাজমুলকে সে পথ থেকে ফেরাতে পারেন না স্ত্রী লিমা। গত ১৩ মার্চ সকালে লিমা রান্না ঘরে রান্না করছিলেন। মশলা নিতে ঘরে গেলে পেছন থেকে শরীরের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী নাজমুল। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। স্বামী নাজমুল মল্লিক ঘরের দরজা দিয়ে সটকে পড়েন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। ততক্ষণে লিমার শরীরের নিম্নাংশের ৬০ শতাংশ ঝলশে যায়। প্রথমে সত্য বলতে শ্বশুরসহ তাদের লোকজন বারণ করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তির পর পরই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার পরামর্শ দেন। পরদিন তাকে ঢাকায় নেয়া হয়। বর্তমানে লিমা বার্ন ইউনিটের ২৫ নং বেডে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন লিমার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। কী হবে ঠিক বলা যাচ্ছে না।

এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমশি করলেও ঘটনার ৭ দিনের মাথায় লিমার বড় ভাই হাসান বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নাজমুল ও তার মামি সোনালী বেগমকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয় নাজমুল মল্লিক তার মামি সোনালীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে দুজন মিলে হত্যার জন্যই লিমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে মেরে ফেলার অপচেষ্টা চালান। মামলা দায়েরের ১৩ দিনের মাথায় গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হিজলগাড়ি ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এএসআই শফিকুর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নাজমুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত নাজমুলকে গতকাল সোমবার আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এদিকে গ্রেফতারকৃত নাজমুল সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলো না।