দামুড়হুদার জয়রামপুরে সড়কে ঝরলো ১৩ জনের তরতাজা প্রাণ

 

স্টাফ রিপোর্টার: ট্রাকের ধাক্কায় চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া ভটভটি মহাসড়কের ওপর পড়ে আছে। পিচের কালো সড়ক রক্তে লাল। সড়কের ওপর ও পাশে ছড়িয়ে পড়ে শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশ। পড়ে আছে গামছা দিয়ে বাঁধা টিফিন ক্যারিয়ারের খাবার- আলুভর্তা ও ডিমভাজি। পাশেই কোদাল, শাবল, মাথাল, ছেঁড়া স্যান্ডেল, গামছা ও লুঙ্গি।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর বটতলায় চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর মহাসড়কে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার স্থলে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। জয়রামপুর বটতলায় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বালুভর্তি ট্রাক ও যাত্রীবাহী ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। এদের মধ্যে ৪ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ৪ জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সামান্য আহত ৩ জন বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা মহাসড়কের জয়রামপুর স্কুল বটতলা নামক স্থানে এ ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দামুড়হুদার বড় বলদিয়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাড়ি বাড়ি ঘরে ঘরে চলছে আহাজারি। নিহতদের দাফন ও আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রতি পরিবারকে অনুদান দিয়েছে জেলা  প্রশাসন ও রাইজিং গ্রুপের পক্ষে। গতকালই জানাজা শেষে সকলের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

গ্রামসূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বড় বলদিয়া গ্রামের ২৬ শ্রমিক গতকাল রোববার সকালে একটি আলমসাধু (শ্যালোইঞ্জিনচালিত) চড়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার খুদিয়াখালী গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। ওই গ্রামের একটি সড়ক নির্মাণ কাজের জন্য তারা যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৬টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর স্কুল বটতলায় পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতির একটি বালু বোঝাই ট্রাকের (চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৫৮৮) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৮ শ্রমিক। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান ৪ জন। পরবর্তীতে রাজশাহী নেয়ার পথে আরও এক শ্রমিক মারা যান। নিহতরা হলেন- বড় বলদিয়া গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে আলমলসাধুচালক ইজ্জত আলী (৪৫), রহিম বক্সের ছেলে আবদার রহমান (৪০), ঠাণ্ডু রহমানের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩২), ইন্নাল হোসেনের ছেলে আকুব্বার আলী (৫০), ঘেদা মণ্ডলের ছেলে নজির হোসেন (৬০), গাজি রহমানের ছেলে শান্ত হক (২০), বাবুল হোসেনের ছেলে ঘরজামাই হাফিজুল ইসলাম (৩৩), ফিরোজ আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম (২৮), রমজান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫০), ভোলা মণ্ডলের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪৮), কানাই মণ্ডলের ছেলে লাল চাঁদ আলী (৪৪), খোদা বক্সের ছেলে জজ মিয়া (৩৪) ও লিয়াকত আলীর ছেলে শাহীন আলী (১৮)।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাকের ধাক্কায় ভটভটিটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মহাসড়কের ওপর পড়ে আছে। পিচঢালা মহাসড়কে রক্তের ছাপ। হতাহত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। পড়ে আছে গামছায় বাঁধা ও টিফিন ক্যারিয়ারে থাকা খাবার। আলু ভর্তা ও ডিম ভাজি বেরিয়ে পড়েছে। পড়ে আছে কোদাল, শাবল, মাথাল ও স্যান্ডেল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একদল শ্রমিক নিয়ে একটি ভটভটি দর্শনার দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা অভিমুখে যাচ্ছিলো। বিপরীত দিক থেকে আসছিলো বালুভর্তি একটি ট্রাক। জয়রামপুর স্কুলের কাছে ভটভটিকে সজোরে ধাক্কা মারে ট্রাকটি। ভটভটিটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ট্রাকচালক ও তার সহকারী পালিয়ে যান। শ্রমিকদের আর্তনাদে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। স্থানীয়রা দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। দুর্ঘটনায় আহত নুর ইসলাম বলেন, তিনিসহ ২২ জন ভটভটিতে গাদাগাদি করে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনা ঘটে।

বড় বলদিয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক আহসানুল হক জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে দুপুরে শাহীন নামের আরও একজন মারা যান। এ দিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁডালো ১৩। হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, ৬ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন, মিনাজ উদ্দিনের ছেলে আলী হোসেন, নাসির উদ্দিনের ছেলে কালুব্বার কালু, আনোয়ার হোসেনের ছেলে মজিবর রহমান, লিয়াকত আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান, নাসির উদ্দিনের ছেলে শফিউদ্দিন ও কিতাব আলীর ছেলে সোহরাব হোসেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আজান আলীর ছেলে আলতাফ হোসেন, আশু ঘরামীর ছেলে নূর ইসলাম বুড়ো, আসান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম ও আবদুল জলিলের ছেলে আরিফুল ইসলাম। আলমসাধুতে থাকা চার শ্রমিক একই গ্রামের জিয়া হক, কটা আলী, আলী হোসেন ও নুর ইসলাম সামান্য আহত হলেও বাড়ি ফিরেছেন। তারা জানান, বালু বোঝাই ট্রাকের ড্রাইভার সম্ভবত স্বাভাবিক ছিলো না। একবার ডানে, একবার বাঁয়ে কাটানোর মতো হতেই মুহূর্তেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

দামুড়হুদা থানার এসআই মেজবাহ উদ্দীন জানান, দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের দু পাশে বহু যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এরপর ঘণ্টাখানেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে তিনি জানান। দামুড়হুদা থানার ওসি আবু জিহাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একই দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে আলমসাধু ওভারটেকিং করতে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। ট্রাকচালক পালিয়েছে। ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ বলেন, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৮ জন নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পর ৪ জন মারা যান। পরে আরও একজন মারা গেছে শুনেছি। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস মাথাভাঙ্গাকে জানান, যারা নিহত হয়েছেন তাদের দাফনের জন্য প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে। একই সাথে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের পরিবারকেও সমপরিমাণ অর্থ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও রাইজিং গ্রুপের পক্ষে বিএনপি নেতা মাহমুদ হাসান খান বাবু হত্যাহত প্রত্যেককে ১০ হাজার করে দেয়া কথা জানান।

দর্শনা অফিস/দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা মহাসড়কের জয়রামপুর স্কুল বটতলায় ঘটলো এ অঞ্চলের স্মরণকালের ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা। বালিভর্তি ট্রাকের মুখোমুখি ধাক্কায় আলমসাধু চালকসহ ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১০ জন। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে হাজারো মানুষের ভিড় জমে। ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে আতকে উঠে অনেকেই। কেউ কেউ সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছে। মৃত্যু খবর দামুড়হুদার বড়বলদিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দিকগ্বিকভাবে ছুটতে থাকে স্বজন হারা মানুষ ও গ্রামবাসী। ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে। বিক্ষুব্ধ মানুষের ভিড়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে উদ্ধার প্রক্রিয়া চালায়। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে, আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। থানায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। দুর্ঘটনার পরপরই ঘাতক ট্রাক ফেলে পালিয়েছে চালক ও হেলপার। পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে চালক ও হেলপারকে। গতকালই জানাজা শেষে সকলের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। হতাহতরা দীর্ঘদিন ধরেই এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। নিজেদের ব্যবস্থায় যাতায়াতের জন্য সম্মলিতভাবে কেনা হয়েছিলো আলমসাধু। কাক ডাকা ভোরে গামলায় পানতা ভাত বেঁধেই প্রতিদিনই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণকাজে ছুটতেন তারা। প্রতিদিনের মতো গতকাল রোববার ভোরে একত্রিত হলেও কাজে বেরুতে খানেকটা দেরি হয়ে যায়। ফলে ভোরের আধার কাটিয়ে যখন পশ্চিম আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছিলো, ঠিক তখনই ২৩ জন রওনা হয় আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্দেশে। প্রতিদিনের মতো ২৩ জন শ্রমিক নিয়ে আলমসাধুটি চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা সড়কের দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর স্কুল বটতলা নামক স্থানে পৌঁছুলে বিপরীত দিক থেকে সিলেটি বালুভর্তি দ্রুতগতিতে আসা ঘাতক ট্রাক (চুয়াডাঙ্গা-ট-১১-০৫৮৮) সজোরো মুখোমুখি ধাক্কা দেয়। এ ধাক্কায় আলসসাধু দুমড়েমুচড়ে লণ্ডভণ্ডভাবে ছিটকে পড়ে ২৩ জন। ট্রাকের চাকা পিষ্ট হয়ে ও পিচ রাস্তায় আছড়ে পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৮ জন। হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো ৫ জনের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চালক বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরপরই চুয়াডাঙ্গার নীল কোমল ট্রেডার্সের ঘাতক ট্রাকচালক রাজিব ও হেলপার ঘটনাস্থল থেকে পালায়। চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়ের ফরজ আলীর ছেলে রাজিবসহ হেলপারকে গ্রেফতারের জন্য খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান। ওসি জিহাদ আরো জানিয়েছেন, জেলা প্রসাশকের অনুমতিক্রমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ট্রাকযোগে ১৩ জনের লাশ নেয়া হয় বড়বলদিয়া গ্রামে। এ দুর্ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গতকালই থানায় মামলা দায়ের করেছে। ট্রাকটি উদ্ধার করে নেয়া হয়েছে থানা হেফাজতে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে সড়ক অবরুদ্ধ মুক্ত করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, পুলিশ সুপার  ভারপ্রাপ্ত বেলায়েত, সহকারী পুলিশ সুপার কলিমুল্লাহ, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আছর বাদ ১৩ জনের লাশ জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে বড়বলদিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ চত্বরে ভিড় জমাতে থাকে আশপাশ এলাকার মানুষ। বড়বলদিয়া গ্রামটাই যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। একে একে লাশগুলো আনা হয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় ১৩ জনের লাশ। এ সময় উপস্থিত জনতা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে। শোকাহত মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। পরে সারিবদ্ধভাবে রেখে লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। জানাজা শেষে স্থানীয় গোরস্তানেই ১৩ জনের লাশ এক বেদনাবিধূর পরিবেশে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড় জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাও. আক্তারুজ্জামান। স্মরণকালের ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় একই গ্রামের ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে গোটা এলাকার বাতাস। সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশের। ১৩ জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। এছাড়াও দাফন ও জানাজার নামাজে উপস্থিত হয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আনোয়ারুল হক মালিক, সেক্রেটারি রুহুল আমীন, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান, কেরুজ সেলস অফিসার শেখ শাহবুদ্দিন, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, যুগ্মসম্পাদক, ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, ইউপি চেয়ারম্যান শাহ এনামুল করিম ইনু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল হাসান তনু, জেলা পরিষদের সদস্য মুন্সি সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা বরকত আলী, মুনতাজ হোসেন, জামায়াত নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট, শফিউল্লাহ প্রমুখ। ওই দিনই চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের পক্ষে নিহত ও আহত ২৩টি পরিবারের মধ্যে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম ও উপসহকারী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান। জানাজার নামাজের আগে ২৩টি পরিবারের মধ্যে বিএনপি নেতা রাইজিং গ্রুপের পক্ষে মাহমুদ হাসান খান বাবু আরও ১০ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেন খাজা আবুল হাসনাত।

এদিকে ভারতে অবস্থানরত চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর সড়ক দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। সেই সাথে তিনি দু একদিনের মধ্যেই দেশে ফিরে নিহতদের পরিবারে এবং আহতদের চিকিৎসাবাবদ আর্থিক সহায়তা দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এদিকে মর্মান্তিক ওই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসানের নির্দেশে দুপুরে উপজেলার প্রতিটি মসজিদে দোয়া মাহফিলসহ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন ৪ জনই মৃত্যুর সাথে লড়ছে বলে তাদের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন।