মেহেরপুরে দুজনকে অপহরণের পর হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও অপহরক চক্রের হানা
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের সোনাপুরে দুজনকে অপহরণ পূর্বক গলাকেটে হত্যার ৯ দিনের মাথায় গাংনীতে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাংনী উপজেলার চককল্যাণপুর গ্রামের মাঠ থেকে মোশারফ হোসেন (৪৫) নামের এক কৃষককে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তদের মারধরে আহত হয়েছেন মোশারফ হোসেনের সঙ্গীয় কৃষক আলফাজ উদ্দীন (৩৮)। অপহৃত মোশারফ হোসেন চককল্যাণপুর গ্রামের আজের উদ্দীনের ছেলে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের মাঠে স্যালোইঞ্জিন চালিত সেচ পাম্প থেকে গেমা (ঘাস) ক্ষেতে সেচ দিচ্ছিলেন কৃষক মোশারফ হোসেন ও তার সঙ্গীয় আলফাজ উদ্দীন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা মোশারফ ও তার সঙ্গীয় কৃষক আলফাজকে মারধর করে। আহত অবস্থায় আলফাজকে ফেলে রেখে মোশারফকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে মাঠ থেকে আলফাজকে উদ্ধার করে বামন্দীর একটি ক্লিনিকে প্রেরণ করে। গ্রামের লোকজন আশেপাশের গ্রামের লোকজনের সহায়তায় এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসীর সাথে তল্লাশি অভিযান শুরু করে পুলিশের একাধিক দল।
এদিকে রাত একটা পর্যন্ত অপহৃতের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। কী কারণে কারা অপহরণ করতে পারে সে সম্পর্কে তেমন কোনো সন্দেহ করতে পারছে না পরিবার। এখনো পর্যন্ত পরিবারের কাছে অপহরকরা মুক্তিপণও দাবি করেনি। অপহৃত মোশারফের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা ভেবে অস্থির পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকেই পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে। কেন এই অহরণ? তা নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন বিরাজ করছে।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্কা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, ওই মাঠ ও এর আশেপাশে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত মোশারফ হোসেনকে উদ্ধার করা যায়নি। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পরিবার থেকে কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মোশারফকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়সূত্রে আরও জানা গেছে, মোশারফ হোসেন আর্থিকভাবে তেমন স্বচ্ছল নয়। ৪ বার বিদেশে গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। ভালো বেতন জোটেনি তার কপালে। এ কারণে সে আর্থিকভাবে বড় ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে গ্রামের এক বিত্তবানের কয়েক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। ওই জমি এর আগে অন্য এক কৃষক আবাদ করতেন। এ নিয়ে কিছুটা বিরোধ রয়েছে।
মোশরফ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল উল্লেখ করে গ্রামের কয়েকজন জানান, চাষাবাদের পাশাপাশি গ্রামেই তার একটি মুদি-চা দোকান রয়েছে। ক্ষুদ্র এই ব্যবসা ও চাষ করেই তার সংসার চলে। সেক্ষেত্রে মুক্তিপণের জন্য তাকে অপহরণের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না। অন্যদিকে গ্রামের কারো সাথে তার তেমন কোনো বিরোধও নেই। তাই অপহরণের কারণ নিয়ে এক প্রকার ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে তার সঙ্গীয় আলফাজ উদ্দীন অনেকটাই বোবার মতো অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আলফাজ উদ্দীন কারো সাথে কথা বলছেন না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে গাংনী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, মোশারফকে অপহরণের সময় কী ঘটেছিলো তা আলফাজের কাছ থেকে জানার চেষ্টা চলছে। অপহরকদের ভয়ে নাকি অন্য কোনো কারণে আলফাজ মুখ বন্ধ করেছে তা এখনো পরিস্কার নয়। তবে তাকে সাহস দেয়া হচ্ছে। সে মুখ খুললেই অপহরণের বিষয়টি জানা সম্ভব হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ মার্চ রাতে সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে আব্দুল মজিদ ও আসাদুল ইসলাম নামের দুজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। রাতে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ওই রাতেই গ্রামের মাঠে তাদের দুজনকে গলাকেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই জোড় খুন মামলার ৪ আসামি ১৪ মার্চ রাতে নুরপুর মোড়ে পুলিশের সাথে বন্দকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ঘটনা রেশ কাটতে না কাটতে আবারো অপহরণের ঘটনায় ব্যস্ত করে তুলেছে জেলার পুলিশ প্রশাসনকে।