প্রযুক্তির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে

 

দিনাজপুরে একজন পীর ও তার নারী মুরিদকে যে কায়দায় হত্যা করা হয়েছে সম্প্রতি কিছু জঙ্গি হত্যাকাণ্ডের সাথে এর মিল রয়েছে। পুলিশেরও সন্দেহের আঙুল জঙ্গিদের দিকেই। কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন পীরকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেহেতু অত্যাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হচ্ছে, কর্তৃপক্ষকেও তাই প্রযুক্তির ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। গত কয়েক বছরের মধ্যে কথিত পীর লুতফর রহমান ফারুকসহ ছয়জন পীর, সুপরিচিত আলেম মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকীসহ বেশ কয়েকজন আলেম, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, মাজারের খাদেম, শিয়া অনুসারী, মুক্তমনা ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মী খুন হয়েছেন। এ থেকে স্পষ্ট, কিছু গোষ্ঠী তাদের বিশ্বাসের বাইরে অন্য কোনো বিশ্বাস মেনে নিতে পারছে না। সব বিশ্বাসের সহাবস্থানের ঐহিত্যকে হত্যা করে তারা নিজেদের ভ্রান্ত আদর্শের প্রতিষ্ঠা চাইছে।

প্রযুক্তি শুধু জঙ্গি কর্মকাণ্ড নয়, পর্নোগ্রাফি ও মাদকের মতো ভয়ঙ্কর নেশার সাথেও অল্পবয়সী অনেককে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। অভিভাবকরা জানতেও পারছেন না, তাদের কিনে দেয়া মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সন্তানকে কোন অধঃপতনের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ দমনে কিছুদিন আগে আইন করা হলেও এর সুফল স্পষ্ট নয়। মোবাইলফোনের সব নম্বর বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধিত করার অভিযান শেষ হওয়ার পরও দেখা গেলো, যথারীতি মোবাইলফোন নানা অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রযুক্তির ধর্মই হচ্ছে দ্রুত বদলে যাওয়া। অপরাধীরা এই পরিবর্তনশীলতাকে দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে। অনিবন্ধিত ফোন নম্বর বা জাল পরিচয়ের ইমেল ঠিকানা দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ যেখানে আছে তারা তা নেবেই। কর্তৃপক্ষের দায় হচ্ছে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফেসবুক সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের মতো নথি থাকা বাধ্যতামূলক করা হলে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। বাংলাদেশের তরফে অনুরোধ পাওয়ার পর ফেসবুকের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, তাদের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক না হলে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।

সমসাময়িক বিশ্বের এক বড় চ্যালেঞ্জ জঙ্গিবাদ। জঙ্গি তত্পরতা প্রসারিত হয়, এমন কোনো নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিছুতেই থাকা উচিত নয়। বাংলাদেশের আহ্বানে ফেসবুক দ্রুত ইতিবাচক সাড়া দেবে। দিনাজপুরের দুই হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হচ্ছে। সত্যিই কাজটি তাদের নাকি স্বার্থান্বেষী অন্য কোনো মহলের, তা নিরসনের দায়িত্ব পুলিশের। কাজটি সততার সাথে করতে হবে।