বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে আন্দোলন কর্মসূচি
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে পৌরসভার কাউন্সিলরা সম্মানিভাতা বৃদ্ধিসহ ৮ দফা দাবিতে পৌরসভার কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের বয়কট ও কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করেছে।
এ সময় বক্তার বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাসিক সম্মানিভাতা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ওই সার্কুলারে ক’ শ্রেণির পৌরসভা ৮ হাজার টাকা, খ’ শ্রেণির পৌরসভা ৭ হাজার টাকা এবং গ’ শ্রেণির পৌরসভা ৬ হাজার টাকা করে কাউন্সিলরদের সম্মানি ভাতা ধার্য্য করা হয়েছে। কিন্ত, গত ১৮ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও সচিব বরাবর দেখা করে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। এছাড়া জেলা পর্যায়ের পর রাজধানী ঢাকায় গত ২ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসময় সরকারকে ১ মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে দাবি বাস্তবায়নের জন্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাউন্সিলরদের সম্মানিভাতা পৌরসভার শ্রেণি অনুসারে যাথাক্রমে- ৮ হাজার, ৭ হাজার ও ৬ হাজার টাকা ধার্য করেছে। যা অমানবিক ও অসম্মানজনক। ক’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য ২৫ হাজার, খ’ শ্রেণির ২০ হাজার ও গ’ শ্রেণির পৌরসভার কাউন্সিলরদের ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
পৌর কাউন্সিলররা সরসারি জনগণের ভোটে নির্বাচিত তাই জনগণের প্রতি দায়-দায়িত্ব অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাউন্সিলররা জনগণের সেবা দিয়ে আসছে। কিন্তু যা সম্মানিভাতা পাই তা খরচের তুলনায় কিছুই নয়। অন্যদিকে জেলা পরিষদের ওয়ার্ড সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত না হলেও তাদের সম্মানি ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। যা পৌর কাউন্সিলরদের জন্য অত্যান্ত অসম্মানজনক। তাই অনতিবিলম্বে সম্মানজনক সম্মানিভাতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ অফিস ফাঁকা রেখে এবং প্রধান ফটকে মানববন্ধন করে কলম বিরতির ঘোষণা দেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার প্রধান ফটকে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ও ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি। এসময় সংরক্ষিত সদস্য শাহিনা আক্তার, সুলতানা আরা বেগম ও শেফালি বেগম, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম খোকন, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুস সালেহীন লিটন, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেদুল হাসান মানু, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হোসেন ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক মুক্তা উপস্থিত ছিলেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনার পৌর প্রধান ফটকে দাড়িয়ে পৌর কাউন্সিলররা অনির্দিষ্টকালের জন্য অফিস বয়কট ও কলম বিরতির ঘোষণা দেন। দর্শনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক পৌর কাউন্সিলরদের বৈষম্য ও অসম্মানজনক মাসিক সম্মানিভাতা বৃদ্ধিসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তাদের এ আন্দোলন।
আন্দোলনকারীরা বলেছেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হলে প্রস্তাবিত ৮ দফা দাবি সরকারকে মানতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্যানেল মেয়র রেজাউল ইসলাম, কাউন্সিলর হাসান খালেকুজ্জামান, সাহিকুল আলম অপু, মনির সরদার, নজরুল ইসলাম, কানচু মাতবর, চান্দু মাস্টার, মঈনুদ্দিন আহম্মেদ মন্টু, আম্বিয়া খাতুন ফুট্টুরি, সুরাতন নেছা, জাহানারা খাতুন প্রমুখ।
এদিকে দর্শনা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ আন্দোলনে একত্মতা ঘোষণা করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের পক্ষে প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ, রুমি আলম পলাশ, শাহআলম, রুহুল আমীন, মোমিনুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, ইউনুস আলী প্রমুখ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর পৌরসভার ১২ জন কাউন্সিলর পৌরসভা বয়কট করেছেন। একই সাথে নেমেছেন কলম বিরতিতে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে পৌরসভার প্রধান ফটকে গতকাল টানানো হয়েছে আন্দোলনের ডাক সম্বলিত ব্যানার।
এদিকে পৌর কাউন্সিলরদের আকস্মিক এ আন্দোলতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর নাগরিকরা। এ সময় বক্তব্য রাখেন পৌর কাউন্সিলর আবুল কাশেম, সাইদুর রহমান, সোয়েব আহমেদ অঞ্জন, আফতাব উদ্দিন, আপিল মাহমুদ, আতিয়ার রহমান, হযরত আলী, ওয়াসিম রাজা, খন্দকার আলী আজম, মাহফুজা খাতুন বিউটি, পরিছন নেছা ও রিজিয়া খাতুন। শেষে পৌর কাউন্সিলরা পৌরসভা বয়কট করেণ এবং তাদের ন্যায্য আন্দোলনের বিষয় জনগণকে অবগত করতে পৌরসভার প্রধান ফটকে কাউন্সিলরদের পৌরসভা বয়কটের কারণ সম্বলিত ব্যানার টানানো হয়।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে গাংনী পৌরসভার সাধারণ ওয়ার্ডের ৯ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের ৩ জন কাউন্সিলর কর্মবিরতি পালন করছেন। সকালে পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন পালন করেন আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধন শেষে তারা পৌরসভা কার্যালয় বয়কট করেন।
সভাপতিত্ব করেন পৌর প্যানেল মেয়র ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নবীর উদ্দীন। উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর সাহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, বাবুল আক্তার, আসাদুজ্জামান, আসাল উদ্দীন, এনামুল হক, রবিউল ইসলাম, ফিরোজা পারভীন, পারভিন আক্তার ও মলিদা খাতুন।
প্রসঙ্গত, গত ১০ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিদের সম্মানিভাতা বৃদ্ধি করা হয়। সিটি করপোরেশনের মেয়রের মাসিক সম্মানি ৮৫ হাজার টাকা ও কাউন্সিলরের ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে অন্যান্য ভাতা আগের মতোই বহাল থাকবে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাসিক সম্মানি ৫৪ হাজার টাকা ও আপ্যায়ন ৫ হাজার টাকা, সদস্যদের মাসিক সম্মানি ভাতা ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা মেয়র ৩৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৮ হাজার টাকা ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভা মেয়র ২৮ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৭ হাজার টাকা, ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা মেয়র ২৪ হাজার টাকা ও কাউন্সিলর ৬ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি পাবেন।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাসিক সম্মানি ৪০ হাজার টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান ২৭ হাজার টাকা সম্মানি পাবেন। তবে অন্যান্য ভাতা আগের মতোই বহাল থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরকারি অংশ ৩ হাজার ৬০০ টাকা ও ইউপি অংশ ৪ হাজার ৪০০ টাকাসহ মোট ৮ হাজার টাকা, সদস্য সরকারি অংশ ২ হাজার ৩৭৫ টাকা ও ইউপি অংশ ২ হাজার ৬২৫ টাকাসহ মোট ৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি পাবেন।