মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা কাজে আসেনি : ঝিনাইদহের ১৭ চোরাকারবারি ও ৬ মাদকের গডফাদার অধরা

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহে মাদকের গডফাদাররা অধরা রয়ে গেছে। মন্ত্রপরিষদ থেকে পাঠানো তালিকা মোতাবেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতরা করা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে। উল্টো জেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা দিন দিন প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। তাদের রাজত্ব বিস্তার হচ্ছে শহর থেকে গ্রামে। ফলে মাদকের হাটে পরণিত হচ্ছে ঝিনাইদহ। আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের ভয়াবহতা। গ্রাম, ইউনিয়ন, বাজার ও পাড়া মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। সেরা চোরাকারবারী ও গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রাই ২শ’ বিক্রেতা মাঠে রয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে ১০-১৫ বার করে গ্রেফতার হয়েও পুরানো পেশায় ফিরে আসছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা) থেকে পাঠানো জেলার সেরা ১৭ চোরাকারবারি ও ৬ জন গডফাদার বহাল তবিয়তে।

জেলা প্রশাসনের একটিসূত্রে জানা গেছে, গত বছর জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। কিন্তু সেই আদেশ কাজে আসেনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর তারিখে দেয়া এ পত্রে সূত্র ধরে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ, মহেশপুর ও কোটচাদপুরের মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ১৭ জন অসাধু ব্যক্তিবর্গ এবং গডফাদার ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে ৬ জনের নামের একটি তালিক প্রকাশ করে। সেই তালিকা ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের বরাবর পাঠানো হয়। উপ-সচিব মো: শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী আদেশটিতে সাক্ষর করেন। আদেশের আলোকে তালিকা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত বছরের ২৪ ফেব্রয়ারি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ঝিনাইদহের সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেরা চোরাকারবারী ও গডফাদারদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সরকারি তালিকা মোতাবেক ১৭ চোরাকারবারি ও ৬ জন গডফাদারের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাদক চোরাকারবারী হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে মহেশপুরে রয়েছে ২১ জন। কোটচাঁদপুরে রয়েছে একজন ও কালীগঞ্জে রয়েছে ২ জন। প্রাপ্ত তথ্য মতে তালিকায় মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদার ও আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা হিসেবে আছে ৭ জন ও ১৭ জন রয়েছে চোরাকারবারী। এর মধ্যে কোটচাদপুরের আখ সেন্টারপাড়ার মোমিন পাঠানের ছেলে পৌর কমিশনার রেজাউল পাঠান দুইবার গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের আটক করার বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছাদেকুর রহমান বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার থেকে পাঠানো তালিকার বিষয়ে জানা নেই তার। তবে গেলো দুই মাসে মাদক বিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭-৮ জনকে দুইমাস করে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন আশাফুর রহমান বলেন, চিঠি পাওয়া মাত্রই থানার অফিসার ইনচার্জকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের চিঠি সীমান্তের তিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছেনি বলে তারা জানান।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধিসহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পদেও নির্বাচিত হচ্ছেন। শুধু রেজাউল পাঠান নয়, আরো অনেক চেয়ারম্যান কিংবা মেম্বার অথবা অন্য পদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। কথিত আছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কতিপয় অসৎ সদস্য তাদের সহায়তা করে আসছে। এতে করে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যক্তিরা আইনের কাছে অধরাই থাকছে। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে মাদকের মামলা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে। পাশাপশি বিজিবি ও র‌্যাব নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। স্থানীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছ থেকে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জেলা মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির সদস্যরা স্বর্বগ্রাসী মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে বিরামহীনভাবে চলছে মাদকের কারবার। সরকার আসে, সরকার যায়, পুলিশ আসে পুলিশ যায়, কিন্তু পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে না।

Leave a comment