মেহেরপুরের গাংনীতে জনসভায় বিএনপির প্রতি রাশেদ খান মেনন

 

রাজনীতিতে ফেল করার দায়ভার জনগণের ওপর দেবেন না

মাজেদুল হক মানিক: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিএনপিকে ব্যর্থ দল হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে বলেছেন, রাজনীতিতে ফেল করার দ্বায়ভার জনগণের ওপর দেবেন না। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি নিজের দলের যে ক্ষতি করেছে, তার খেসারত তারাই দিচ্ছে। সেই ব্যর্থতার দায়ভার নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আবার তারা নির্বাচন থেকে পালাতে চাইছে। কিন্তু এবার যদি নির্বাচন থেকে পালায় তাহলে সেই পালানো শেষ পালানো হবে। আর যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে সেই নির্বাচন হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহেরপুর গাংনী হাইস্কুল ফুটবল মাঠে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

বক্তৃতায় তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটকে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা আখ্যায়িত করে বলেন, তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বাংলাভাই ও শাইখ আব্দুর রহমানের মতো মানুষের উত্থান ঘটিয়েছিলো। কিন্তু এর আমাদের জঙ্গিবাদের মুখে বাংলাভাই মিডিয়ার কারসাজি বলে উড়িয়ে দিয়েছিলো চার দলীয় জোট সরকার প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু তাদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরেও মূল উৎপাটন হচ্ছিলো না। ব্যর্থ দলগুলো আগুন সন্ত্রাসের জন্ম দিয়ে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছিলো। পরবর্তীতে গত বছর সারাদেশে ধারাবাকিভাবে নারকীয় কিছু হত্যাকা- এবং হলিআর্টিজান ও শোলাকিয়া ঈদগায় জঙ্গি হামলা করে ফায়দা লুটে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।

কৃষক ও শ্রমজীবি মানুষের নায্য অধিকার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি প্রধান বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রগতির ফসল হচ্ছে কৃষক, জেলে, কামার ও কুমারদের পরিশ্রম। অত্যান্ত পরিশ্রম করে যে কৃষক ফসল ফলালো অথচ সে দাম পেলো না। সরকার ধান ক্রয় কেন্দ্র চালু করলো কিন্তু ধান ক্রয় চলে গেলো দলবাজির চক্রান্তে দলীয় লোকদের হাতে। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। অপরদিকে জীবনবাজি রেখে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরলেও তা জেলেরা ভোগ করতে পারেন না। এসব বৈষম্য দূর করা না গেলে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছুতে ব্যর্থ হবে। অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আব্দুল মাবুদের সভাপতিত্বে ও পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড নুর আহমদ বকুলের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আনিছুর রহমান মল্লিক, অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, অ্যাড. ইয়াছিন আলী এমপি, কেন্দ্রীয় সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, এনামুল হক এমরান ও দিপঙ্কর সাহা দিপু।

গাংনী তথা মেহেরপুর জেলার উন্নয়নে মন্ত্রীর কাছে ২৫ দফা দাবি তুলে ধরেন কমরেড নুর আহমদ বুকল। দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে ও গাংনী ভাটপাড়া নীলকুঠি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেজন্য তিনি মেহেরপুর জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা প্রেরণের অনুরোধ করেন। অনান্য দাবিগুলো সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেবেন বলেও আশার কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। ঈশ্বরদী বিমান বন্দর চালু করার কথাও বলেন মন্ত্রী।

এদিকে মন্ত্রীর বক্তব্যে ফুঁটে ওঠে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি। তিনি বলেন, দেশের চলমান অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার কোনো বিকল্প নেই। আমি আপনাদের পাশে আছি এবং পাশে থাকবো উল্লেখ বলে মন্ত্রী  বলেন,  আগামি নির্বাচনে এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী থাকবে। দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের জন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে মন্ত্রী গাংনী ওয়ার্কার্স পার্টি কার্যালয়ে পৌছুলে নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। জনসভা ঘিরে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন। কয়েক হাজার নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে জনসমুদ্রে রুপ নেয়।

 

Leave a comment