চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর পরই কন্যা নবজাতকের দর ওঠে ২০ হাজার
কামরুজ্জামান বেল্টু: কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই তাকে অন্যের কোলে গোচিয়ে দেয়ার তোড়জোড় শুরু করে কিশোরী মা পলি খাতুন। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে বসানো পলি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পালিয়ে যায় তার স্বামী। বিয়ের সময় যে পরিচয় দিয়ে বসেছিলো স্বামীর আসনে, সেই পরিচয়ে জিনারুল নামের ওই ব্যক্তির হদিস মিলছে না। ফলে তার স্মৃতিও রাখবো না কোলে। এরকমই ক্ষোভ ঘৃণা বিরক্ত প্রকাশ করে নিজের গর্ভে ধারণ করা সন্তানকে অন্যর হাতে তুলে দিতে উদগ্রিব এখন পলি।
পলি তার সন্তানকে কন্যাকে অন্যের কোলে তুলে দেয়ার বিনিময়ে প্রথমে কোনো অর্থের দাবি না করলেও পরবর্তীতে চেয়ে বসে টাকা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেরই এক সিনিয়র স্টাফ নার্স ২০ হাজার টাকা দিতে চাইলে পলি ও তার মা সুন্দরী খাতুন প্রশ্ন তুলে বলেন, শুনেছি সন্তান নাকি লাখ টাকায় বিক্রি হয়? এখন আমাদের বেলায় শুধু কুড়ি হাজার কেন? অতো অল্পতে নয়, আরও বেশি পেলেই দিয়ে দেবো মেয়ে। না, গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি দাম ওঠেনি। ফলে পলি খাতুন তার কন্যাসন্তান নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের এক কোণেই বসে ছিলো।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ছোটপুটিমারী গ্রামের রিয়াজ আলীর মেয়ে পলি খাতুনের সাথে এলাকায় রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজ করতে আসা এক যুবকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর বছরখানেক পলির পিত্রালয়েই ঘরজামাই হয়ে থাকে সেই যুবক। সে বিয়ের সময় পরিচয় দিতে গিয়ে বলে নাম জিনারুল, বাড়ি কুষ্টিয়ার হালাসায়। বাপের নাম মোজাম। বিয়ের বছরখানেকের মাথায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক পলি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপরই ওর স্বামী সটকে পড়ে। এরপর আর ফেরেনি জিনারুল। অন্তঃসত্ত্বা পলি খাতুনের গতকাল সকালে প্রসববেদনা দেখা দিলে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান প্রসব করে পলি। এরপরই পলিসহ তার পাশে থাকা পলির মা তথা নবজাতকের নানি ওই সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতককে অন্যের কাছে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। একজন সেবিকা তা নেয়ার আগ্রহ দেখালে পলি ও তার মা টাকা দাবি করে। ২০ হাজার টাকা দিতে চাইলে বলে, ওতো কম টাকায় নয়, লাখ টাকা হলে আমরা ওকে দিয়ে যাবো।
গতকাল বিকেলে নবজাতকের আরো কয়েকজন নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও প্রত্যাশা মতো টাকা না পেয়ে পলি তার সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেয়নি। বিকেলে এক দফা হাসপাতাল ছাড়লেও পরে ফের হাসপাতালে ফিরে একই বিছানায় অবস্থান নেয়। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গাইনি ওয়ার্ডেই ছিলো। পলির ভাই খোকন বলেন, পলিকে যখন জিনারুলের সাথে বিয়ে দেয়া হয় তখন তার বাড়িতে খোঁজ না নেয়া হলেও, জিনারুল যখন চলে যায় তখন আমরা ওই ঠিকানায় যোগাযোগ করি। সেখানে জিনারুলের পিতা-মাতা থাকলেও জিনারুল ফেরেনি বলে জানান।