ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে স্কুল কলেজে অভিযোগ বাক্স স্থাপন

 

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাদেকুর রহমান সহযোগিতায় উপজেলার ১৫ কলেজ, মাদরাসা ও স্কুলে স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ বাক্স। অভিযোগ বাক্স থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ নিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ বাক্সে স্কুল, কলেজ মাদরাসায় পড়–য়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছাত্রীরা  বাল্যবিয়ের তথ্য, কে বা কারা তাদের ইভটিজিং করছে সেই বিষয়ে অভিযোগ দিতে পারে। বিষয়টি নতুন হওয়ায় এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। আর ইউএনওর এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন সোনার বাংলা ফাউন্ডেশন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্য্যালয়সূত্রে জানা গেছে , বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিয়ের কারণে বহু নারী নির্যাতন, শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হারের মতো নানা ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ না হলে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না। সাধারণত বাল্যবিয়ে অভিভবাবকদের অসচেতনার কারণে বেশি ঘটে। এছাড়াও স্কুল কলেজের ছাত্রীদের ইভটিজিং ও কম হচ্ছে না। রাস্তায়, স্কুলের মোড়ে  ছাত্রীদের ইভটিজিং করা হয়। অনেক মেয়ে লজ্জায় এগুলো লুকিয়ে রাখে। বলার যায়গা পায় না। অনেক মেয়েকে বাল্যি য়ে দেয়া হয়। কিন্তু কারো কাছে সরাসরি বলতে পারে না। কোথায় অভিযোগ দিলে তার বাল্যবিয়ে বন্ধ হবে কিংবা ইভটিজারের শাস্তি হবে সেটা তারা জানে না। অনেকে নীরবে এগুলো সহ্য করে। এগুলোর কথা চিন্তা করে পাইলট প্রকল্প হিসেবে উপজেলার ১৫ স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় একটি বাক্স লাগানো হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে অভিযোগ বাক্স। যেখানে মেয়েরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ইভটিজিং, কিংবা কোথাও বাল্যবিয়ের আয়োজন হচ্ছে সে বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ বাক্সে রাখবে। প্রতিদিনি সকালে-বিকেলে স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক বাক্সটি খুলে দেখবেন কেউ কোনো অভিযোগ দিেেয়ছ কি-না। সেটা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়ে সমাধান করা না গেলে উপজেলা প্রশাসন অথবা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরকে জানাবে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও ছাদেকুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।

সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের পরিচালক শিবু পদ বিশ্বাস জানান, ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই বাল্যবিয়ে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইতোমধ্যে তিনি ২০০৪ সাল থেকে শতাধিক মেয়েকে বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য স্কুল-কলেজ, মহল্লা, ইউনিয়ন পরিষদে সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। বাল্যবিয়ের কূফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি জানান, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদে বাল্যবিয়ে নিয়ে আলোচনাসভা হয়। সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাদেকুর রহমান বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে স্কুল-কলেজে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করতে বলেন। সেই মোতাবেক উপজেলা প্রশাসনকে তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে উপজেলার ১৫ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এই অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে সব স্কুল-কলেজে স্থাপন করা হবে।

বেজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বলেন, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধে তার বিদ্যালয়ে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। অনেক মেয়ে তাদের অভিযোগগুলো এই বাক্সে রাখবে। আমরা প্রথমে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জানাবো। বিষয়টি সেখানে সমাধান না হলে উপজেলা প্রশাসনকে জানাবো। তিনি আরও জানান, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং প্রতিরোধ অভিযোগ বাক্স  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Leave a comment