সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করে দুজনের নাম
স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব কেএম নুরুল হুদাকে ১২তম নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহ্বুব তালুকদার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই নিয়োগ আদেশ জারি করা হয়। আজ মঙ্গলবার এই নিয়োগ আদেশের গেজেট প্রকাশ করা হবে। প্রধান বিচারপতি সুবিধাজনক সময়ে তাদের শপথ পাঠ করাবেন। এর আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে গঠিত সার্চ কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে দুইজন করে ব্যক্তির নাম দিয়ে মোট দশজনের নামের একটি তালিকা গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নুরুল হুদা ছাড়াও সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলI। নুরুল হুদা ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ৩০ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। আর আলী ইমাম মজুমদার ১৯৭৭ সালে চাকরিতে যোগ দেন। কেএম নুরুল হুদা চাকরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছাড়াও কিছু মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকার সময়ে বিএনপি সরকার নিয়োগকৃত ডিসি হিসাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের ১২ জুলাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া তিনি ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচন ও ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের ২৪ জুলাই বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাকে অন্যান্য কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। সর্বোচ্চ আদালত অবশ্য বিএনপি সরকারের ওই আদেশ বেআইনি ঘোষণা করেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন এবং সকল ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। নূরুল হুদার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। তিনি সস্ত্রীক ঢাকায় বসবাস করেন। তিনি তিন সন্তানের জনক। তার এক মেয়ে ও এক ছেলে কানাডায় থাকেন। এক মেয়ে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। সার্চ কমিটি আরও যে কয়জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিলেন তারা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জারিনা হোসেন খান ও সাবেক সচিব আব্দুল মান্নান। গতরাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে ১০ জনের নাম প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে সার্চ কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে পাঁচ যোগ্যতাকে তারা প্রাধান্য দিয়েছেন। আবশ্যিকভাবে তাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতে হবে। তার দক্ষতা, সততা, দল নিরপেক্ষতাও বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বয়স অবশ্যই ৭০ বছরে নিচে হতে হবে। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সার্চ কমিটিতে ছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য শিরীন আখতার। আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি তাদের প্রথম বৈঠক থেকে ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঁচজন করে ব্যক্তির নাম চেয়েছিলো। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৫টি রাজনৈতিক দল ১২১টি নাম প্রস্তাব করেছিলো।
উল্লেখ্য, নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ৩১টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের পর সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে গত ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যে সার্চ কমিটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।