মাদককে না বলুন বাল্যবিয়ে বর্জন করুন স্লোগান নিয়ে মুন্সিগঞ্জে বন্ধুদের মিলন মেলা
অনিক সাইফুল: বন্ধুরা মিলেছিলেন প্রাণের টানে, ভালোবাসার বন্ধনে। সে এক অন্য রকম আয়োজন, অন্য রকম অনুভূতি। মুন্সিগঞ্জ মেতেছিলো বর্ণিল শোভাযাত্রায়। পুরোনো সব বন্ধুর পদভারে মুন্সিগঞ্জ বাজার পরিণত হয়েছিলো মিলন মেলায়। বন্ধু কাকে বলে তার নজির দেখলো মুন্সিগঞ্জবাসী। কোনো ভেদাভেদ নেই। ধনী-গরিব, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ব্যাংকার, শিক্ষকসহ সব শ্রেণি-পেশার বন্ধুরা সমবেত হয়েছিলেন পুরোনো স্মৃতিকে বুকে ধারণ করতে। একটু মতবিনিময় করতে। মন খোলোসা করে একটু হাসতে। একটু ইয়ারকি-আড্ডা মারতে। একাট্টা বন্ধুত্বে তারা। বন্ধুত্ব অমর, অক্ষয়। ব্যান্ডের তালে তালে নেচে গেয়ে তারা মাতোয়ারা করে তুললেন। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বন্ধুরা কাঁদলেন, কাঁদালেন। হাসলেন প্রাণ খুলে। কতো বছর কারো সাথে কারো দেখা নেই। বন্ধুত্বকে অমর করে রাখতেই বন্ধুদের এই প্রয়াস। বলছিলাম আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ একাডেমির ২৬তম ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থী বন্ধুদের কথা। তারা ১৯৬৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বদরুদ্দোজা বুদো মিয়ার গদিঘরের পেছনের খোলা জায়গায় বসেছিলো বন্ধুদের মিলন মেলা। পুনর্মিলনী এ অনুষ্ঠানে সকাল হতে না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হতে থাকেন তারা। শুরু হয় রান্নাবাড়া। আসে ব্যান্ডপার্টি। সকালে নাস্তার পরই শুরু হয় স্মৃতিচারণ। বন্ধুরা হারানো দিনের স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা রোমন্থন করেন। একের পর এক চলতে থাকে মায়াভরা, খুশিভরা পুরোনো দিনের কথা। সেই পরিবেশ আর এই পরিবেশের চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবারই উঠে আসে মুন্সিগঞ্জ একাডেমির প্রয়াত প্রধান শিক্ষক এআর আসাদুজ্জামানের নাম। উঠে আসে এক আদর্শের কথা। হারানো অনেক শিক্ষকের কথা বলতে গিয়ে বন্ধুরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তাদের কথা স্মরণ করে কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন। পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া বন্ধুদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া করতেও ভোলেন না তারা। বেলা সাড়ে ১১টায় ব্যান্ডের তালে তালে নেচে-গেয়ে বের করা হয় শোভাযাত্রা। মাদককে না বলুন, বাল্যবিয়ে বর্জন করুন স্লোগান সংবলিত ব্যানার হাতে যখন বন্ধুরা মুন্সিগঞ্জ বাজার হয়ে মুন্সিগঞ্জ একাডেমির দিকে হাঁটছিলেন, তখন মুন্সিগঞ্জবাসীর নজর কাড়ে দৃষ্টিনন্দন র্যালিটি। এ সময় অসুস্থ বন্ধু বাড়াদী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুশামা জোয়ার্দ্দারকে ছাড়েননি বন্ধুরা। তাকে একটি ভ্যানে বসিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জ একাডেমি চত্বরে শোভাযাত্রাসহ বন্ধুরা জড়ো হন। চলে ফটোসেশন। এখানে যোগ দেন মুন্সিগঞ্জ একাডেমির সভাপতি বদরুদ্দোজা বুদো, প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান, সহকারী শিক্ষক জামান লিঙ্কন ও আনারুল ইসলাম। পরে পুনরায় সভাস্থলে ফিরে আসেন বন্ধুরা। এ সময় সেখানে যোগ দেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সৃজনী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আহাদ আলী মোল্লা। তিনি তার প্রাথমিক বিদ্যালয় জীবনের দুই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুন্সিগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুনীল কুমার ও বনি আমিনের সাথে আলাপচারিতায় মশগুল হন। দীর্ঘক্ষণ তারা স্মৃতিচারণ করেন পুরোনো দিনের।
মুন্সিগঞ্জের বিশিষ্ট শিল্পপতি শ্রী শ্যাম সুন্দর আগরওয়ালা, ডা. রফিকুল হক বাবলু, রবিন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শুকুর আলী মাস্টার, মঈনউদ্দিন শেখ, সাহাবুল হক, ইদ্রিস আলী, রনজিৎ সরকার, হাজি মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ বন্ধুদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৭৫ জন বন্ধু বেলা ২টায় মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন। সেখানে যোগ দেন কিছু আমন্ত্রিত অতিথিও। পরে প্রয়াত বন্ধু শিক্ষক আব্দুস সাত্তারসহ চির বিদায় নেয়া বন্ধুদের উদ্দেশে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকবন্ধু শুকুর মাস্টার। এরপর শুরু হয় র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠান। এতে প্রথম পুরস্কার পান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার তৌহিদ হোসেন মনি। এর মধ্যদিয়েই শেষ হয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।