নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য হওয়া জরুরি

 

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হওয়ায় জাতির দৃষ্টি এখন বঙ্গভবনের দিকে। পদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলসহ দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে, সংলাপ থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তে শক্তিশালী তথা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠনের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। যেহেতু উচ্চ আদালতের নির্দেশ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই সেহেতু শক্তিশালী এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য ইসিই পারে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে। বর্তমান ইসির মেয়াদও শেষের দিকে। নতুন কমিশনই আগামী ২০১৯ সালের সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবেন। দেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে সবার আস্থাভাজন নির্বাচন কমিশন গঠনের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান ইসির গ্রহণযোগ্যতা নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ। আর নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ উদ্যোগকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিকতার সাথে নিয়েছে, রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপকালে দলগুলো তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবও তুলে ধরেছে। এসব থেকে যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসা অসম্ভব নয়। আবার এটাও ঠিক, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে কাজ করতে হয়। তা সত্ত্বেও ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আশাবাদী হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও প্রধান অভিভাবক। তিনি যেমন সাংবিধানিকভাবে নিরপেক্ষ, তেমনি সর্বমহলে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিও। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিজের বিবেকের প্রতিফলন ঘটাতে পারেন রাষ্ট্রপতি। এক্ষেত্রে তিনি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে তা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করানোর চেষ্টা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তা ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার অসন্তোষ ও মতানৈক্যের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে সহায়ক হতে পারে। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় যা অত্যন্ত জরুরি বলেই রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন। পাশাপাশি এমনটি হলে তা একদিকে যেমন জাতির জন্য স্বস্তিকর হবে, তেমনি রাষ্ট্রপতিও ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মনে করা যায়।

এটা ঠিক যে, এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেছিলেন। ওই সংলাপের আলোকে তিনি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু ওই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কাজেই এ বিষয়টি মাথায় রেখেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি গ্রহণযোগ্য ইসি গঠন করবেন এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর। উল্লেখ করা যেতে পারে, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আইনের কথা বলা হয়েছে। আর ওই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। বাস্তবতা হলো, এ পর্যন্ত কোনো সরকারই এই আইন প্রণয়ন করেনি। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ইসি গঠনে আইন চায়। প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষ্যের মধ্যদিয়ে আইন প্রণয়নে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা স্পষ্ট। আবার ইসি গঠনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি চর্চার বিষয়টিও অস্বীকার করা যাবে না।

সর্বোপরি বলতে চাই, আমাদের সমাজ ব্যাপকভাবে বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির অভাব হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। আবার শুধু ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতা নয়, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা জরুরি। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সংলাপের পরিণতি যেন প্রকৃতই অর্থবহ হয়। এ ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে দায়িত্বশীলতারও পরিচয় দিতে হবে। যার যার দাবি নিয়ে অটল না থেকে রাষ্ট্রপতি তার প্রজ্ঞা ও বিবেক দিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠুধারা গতিশীল হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a comment