আলমডাঙ্গা ব্যুরো: যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ সামসুল আবেদীন খোকনের জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানপদে অভিষেকের মধ্যদিয়ে সুদীর্ঘ ২৯ বছর পর জেলা পর্যায়ের ক্ষমতা ও নেতৃত্বের স্বাদ পেলো আলমডাঙ্গাবাসী।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বেশ বড় ব্যবধানে সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলার। এমন কি জেলার মধ্যেও আলমডাঙ্গা উপজেলার সর্বাধিক জনসংখ্যাধিক্য রয়েছে। জেলার সর্বাধিক জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ হিসেবে এখানকার রাজনীতিবীদরাই এক সময় জেলার রাজনীতি ডমিনেট করতেন। এমনকি পাকিস্তান শাসনামলেও। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৯৮৮ সাল অবধি দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত জেলার রাজনীতিতে একটানা ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন আলমডাঙ্গার রাজনীতিকরাই। ক্ষমতার মসনদ ছিলো তাদের দখলে।
১৯৫৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়ার প্রয়াত ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীর চেয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি এমএনএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে সামরিক জান্তা আয়ুব খানের শাসনামল অবধি ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এ গুরু দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রাদেশিক পরিষদের এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন আলমডাঙ্গা পৌরসভার বর্তমান মেয়র হাসান কাদির গনুর পিতা এরশাদপুরের প্রয়াত ইউসুফ আলী মিয়া। ১৯৬৮ সালে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন আলমডাঙ্গার প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলমডাঙ্গার ব্যারিস্টার বাদল রশিদ এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হলেও পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা ছাড়েনি। সে সময় প্রাদেশিক পরিষদের মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার প্রয়াত ডা. আসহাবুল হক হ্যাবাসহ দুজন। পরে দেশ স্বাধীনের পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি তিনি এমপি ছিলেন। ১৯৬৫ সালে প্রথম এমএলএ নির্বাচিত হন আলমডাঙ্গার গাংনীর প্রয়াত মিঞা মনসুর আলী। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর তিনি আরও ২ টার্ম অর্থাৎ ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া গ্রামের জাতীয় পার্টির নেতা মকবুল হোসেন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল অবধি একটানা ৩৪ বছর প্রথম পর্যায়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও পরে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন আলমডাঙ্গার রাজনীতিকরা।
এরপর ১৯৮৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা চুয়াডাঙ্গার সন্তান মোহাম্মদ শাহজাহান। এরপর বিএনপি নেতা চুয়াডাঙ্গার শামসুজ্জামান দুদু দুই টার্ম এমপি নির্বাচিত হন। প্রথম ১৯৯৬ সালে ও পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। এরপর ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা সহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। ২০০৮ সাল ও ২০১৩ সালে পর পর দুই টার্ম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও প্রয়াত সহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের পূর্ব প্রজন্ম আলমডাঙ্গায় বসবাস করে থাকলেও বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে তাদের বসবাস চুয়াডাঙ্গায়।
জেলা পর্যায়ে সুদীর্ঘ ২৮/২৯ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আলমডাঙ্গার সন্তান কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেখ সামসুল আবেদীন খোকন। গতকাল রোববার ২২ জানুয়ারি ছিলো তার অভিষেক। জেলা পরিষদে তার এ অভিষেকের ঘটনা আলমডাঙ্গাবাসী একটু ভিন্ন দৃষ্টিতেই দেখছে। জেলা পর্যায়ের ক্ষমতার স্বাদ বা নের্তৃত্বের স্বাদ থেকে আলমডাঙ্গাবাসী প্রায় ৩ দশক বঞ্চিত ছিলো। ৩ দশক পর সেখ সামসুল আবেদীন খোকন আলমডাঙ্গাবাসীর জন্য সেই মর্যাদা আবার পুনরুদ্ধার করলেন আলমডাঙ্গার মানুষ এমনটাই মনে করছেন।