ঘরগুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের : বিএনপির কৌশল বদল

 

স্টাফ রিপোর্টার: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে শাসকদল আওয়ামী লীগে। ২০১৯ সালের ওই ভোটে জয়ের লক্ষ্যে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন উপযোগী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন, এমপি-নেতাকর্মীর দূরত্ব কমিয়ে আনার নির্দেশনা এবং ইশতেহার তৈরির পদক্ষেপের পর এবার সহযোগী সংগঠনের ঘর গোছানার ঘোষণা এসেছে হাইকমান্ড থেকে। গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণে ছক কষা হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার। পাশাপাশি তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলন, কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফর এবং সারাদেশে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার পরিকল্পনাও চলছে দলটিতে। অপরদিকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সরকারকে চাপে রাখা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ঘিরেই কর্মপন্থা ঠিক করছে দলটি। নির্বাচনের আগে সহিংস কোনো কর্মসূচিতে যাওয়ার কথাও ভাবছে না তারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকা নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয় পেতে এ বছর থেকেই মাঠ দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ এ সময়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করে দল গোছানো ও সরকারের উন্নয়ন প্রচারণায় নানামুখি কর্মসূচিও হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। তাদের মতে, জাতীয় সম্মেলনের আগে প্রায় সব জেলার সম্মেলন শেষ হলেও টানা ৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় কিছুটা অসংগঠিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলো। তাছাড়া মহানগর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের আগাম জাতীয় নির্বাচনে মনোনিবেশ করানোর বিষয়টাও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। চলতি বছরে সে দায়িত্বই পালন করা হবে। সূত্র জানায়, দলের ঘর গোছানো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই সহযোগী চার সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এক যুগ বা তারও বেশি সময় আগে গঠিত ওইসব কমিটির মধ্যে ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ১৯ মার্চ তাঁতী লীগ এবং ২৯ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রচারণা পরবর্তী নির্বাচনের জয়লাভের অন্যতম হাতিয়ার। ২০১৭ সালজুড়ে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও এই দায়িত্ব পালন করবে। যেখানে সরকারের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ, হরতাল ও অগ্নিসন্ত্রাসের চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করা হবে।

এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণীসহ মধ্য পর্যায়ের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের পরে স্বল্প সময়ের মধ্যে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের পরিকল্পনা ছিলো তাদের। কিন্তু সে বছর আন্দোলন ফলপ্রসূ না হওয়ায় এক বছর সময় দিয়ে আবারও সরকার পতনের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি। এরপরও সফল না হওয়ায় নতুন করে দল সুসংগঠিত করে সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ঘিরে আন্দোলনের ছক তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন সব কিছু ওলোট-পালোট করে দেয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলন করে সরকারের পতন সম্ভব নয় এমন বিবেচনায় রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করেছে বিএনপি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার পতনের আন্দোলন না করে কিভাবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করা যায় সে বিষয়টিকে এখন থেকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বিগত আন্দোলনে সরকারকে বেকাদায় ফেলা সম্ভব হয়নি বরং ব্যাপকভাবে তাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সত্যিকার অর্থে খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দোলন করে সরকার পতন করা একরকম অসম্ভব বলে তারা মনে করছেন। এজন্য আগামী নির্বাচনের আগে সরকার পতনের জন্য আর কোনো আন্দোলনে যাবে না বিএনপি। জাতীয় কোনো বৃহত্তর ইস্যু ছাড়া নির্বাচনের আগে হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কোনো কর্মসূচিও দেবে না তারা। শুধু জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দেশ-বিদেশের জনমত নিজেদের পক্ষে আনতে তারা কাজ করবেন। আর এর ফাঁকে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন ৫০ শতাংশ সুষ্ঠু হলেই বিএনপির জয়ের সম্ভাবনা প্রবল বলে তাদের ধারণা। এ জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করানো বিএনপির এখন প্রধান লক্ষ্য। এ জন্যই একটি স্বাধীন এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতিকে কয়েকটি প্রস্তাব এবং নাম দেয়া হয়েছে। সূত্র মতে, কমিটি গঠনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে বিএনপি। বিএনপির পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান  জানান, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সাথে বিএনপির আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আশা করছেন, রাষ্ট্রপতি একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকারের সঙ্গে সংলাপ করতে চায় বিএনপি। আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের সংকট সমাধান সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে।

 

Leave a comment