গুটি কয়েকজন মাদককারবারীর কারণেই আলোচিত হয়েছে আকন্দবাড়িয়া
দর্শনা অফিস/বেগমপুর প্রতিনিধি: স্থানটির নাম তমাল তলা। কখন কবে কে তমাল গাছটি লাগিয়েছিলো তা কেউ বলতে পারে না। গ্রামের বর্তমান ও অতিতকে ধারণ করে কালের স্বাক্ষী হয়ে সদম্ভে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তমাল গাছটি। ১২০ বছর বয়সী বৃদ্ধ বলেছিলেন জন্মের পর থেকে এতোখানিই দেখে আসছেন গাছটিকে। এক সময় গাছটি ছিলো ফলে-ফুলে ভরা। বংশ পরম্পপরায় সবাই গাছটিকে এভাবেই দেখে আসলেও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি আসলে তমাল গাছটির বয়স কতো। তবে বয়স যায় হোক না কেন গাছটির যেন যৌবন কাটেনি এখনো। গাছের নামে স্থানটির নাম করণ করা হয়েছে তমালতলা। আকন্দবাড়িয়া তমালতলার তমাল গাছের নিচে বসে কথা হয় গ্রামের এক ঝাক প্রবীণ ও নবীনের সাথে গ্রামের অতিত ও বতর্মান নিয়ে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ২ গ্রামের মধ্যে বহুল আলোচিত গ্রামের নাম আকন্দবাড়িয়া। মাদক চোরাকারবারীদের কারণেই আকন্দবাড়িয়া এ জেলায় আলোচিত-সমালোচিত হয়ে উঠেছে। আকন্দবাড়িয়ায় ১৪ পাড়ায় প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের এ গ্রামের ভোটার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬শ। গ্রামের সিংহ ভাগ মানুষই কৃষি নির্ভরশীল। দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের সংখ্যা প্রায় ৭০ ভাগ। উচ্চ ও মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ ভাগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে গ্রামের এক শ্রেণির অসাধু মানুষ জড়িয়ে পড়ে চোরাকারবারীর সাথে। ধীরে ধীরে মাদক চোরাকারাবারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আলোচিত হয়ে উঠে গ্রামের নাম। আকন্দবাড়িয়াকে মাদকের অভারণ্য বলেই এখন সকলের কাছে পরিচিতি।
গ্রামবাসী বললো, এক সময় এ গ্রামের সুনাম থাকলেও মাদক চোরাচালানীদের কারণে তা আজ বিলীন হয়ে গেছে। এখন এ গ্রামে কেউ ছেলে-মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেও নারাজ। গোটা গ্রাম খুঁজে হয়তো ৬০-৭০ জন মাদক চোরাকারবারী খুঁজে পাওয়া যাবে। গুটি এ কয়েকজনের জন্যই গ্রামের যতো বদনাম। প্রতিরোধ-প্রতিকারের ব্যপারে জানতে চাইলে গ্রামবাসী বলেছে, কয়েকবার চেষ্টা করে লাভ হয়নি। বরং প্রতিবাদকারীদের পড়তে হয়েছে সমস্যায়। তাই যেমন আছি ভালো আছি, ওই ঝামেলাই জড়াতে চাইনে। এছাড়া কে জানে না যে, কারা মাদকের সাথে জড়িত? জানে সবাই। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ডিবি পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস জানে, জানে ডিএসবি। এদের মধ্যে র্যাব মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কাউকে ধরতে পারলেও কদিনের মধ্যে দেখা যায় আইনি ফাঁক ফোঁকড় ডিঙ্গিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে। বাড়ি ফিরে লোকসান পোষাতে ও মামলার খরচার জন্য বাড়িয়ে দেয় মাদক দ্রব্য বেচাবিক্রি। আর প্রসাশনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে মাদকদ্রব্যসহ হোতাকে ধরতে দেখা যায় খুব কম। তাছাড়া আকন্দবাড়িয়া থেকে সদর থানার দুরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ। তারপর আবার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম। বেগমপুর ফাঁড়ির দুরত্বও কম নয়। যার কারণে অনেকটাই নির্বিঘেœ মাদক চোরাকারবার চালাচ্ছে ওরা। অনেকই দাবি তুলে বললো, আকন্দবাড়িয়া গ্রাম দর্শনা ঘেঁষা। তাই ওই গ্রামকে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আওতায় আনা হলে কিছুটা হলেও হয়তো কমতে পারে মাদক কারবার ও অপরাধ মূলক কর্মকা-।
গ্রামবাসী ক্ষোভের সাথে বলে, যে কারণে মাদক চোরাকারবারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, মাদক চোরাচালানীদের সাথে পুলিশের রয়েছে সখ্যতা, ওদের কাউকে কিছু বললেই বিপদ, মামলা-হামলা ও পুলিশি হয়রাণির শিকার হতে হয়। এ গ্রাম থেকে বহু চোরাচালানীকে ধরতে দেখা গেছে প্রসাশনকে। তবে হাতে গোনা ২-১ জনের লঘু সাজা হলেও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতে দেখা যায়নি বাকিদের। পুলিশের কথিত সোর্সের কারণে মামলায় মূল অপরাধীর ছাড়াও আসামি সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলা চালানোর খরচ যোগান দেয়া, মাদক চোরাকারবার ছেড়ে দিলেও পুলিশকে সেলামি দেয়া বাধ্যতা মূলক হওয়ার কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এদের সংখ্যা। হেরোইন, গাঁজা, মদ ও ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারীদের মহাজনরা পুরুষ হলেও বহনকারী ও বিক্রেতারা বেশির ভাগই নারী। ইদানিং আবার মাদকের জগতে আরও একটি নাম জুটে বসেছে। তা হচ্ছে মারণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট। ইয়াবা ট্যাবলেটেতো ছেয়ে গেছে গোটা গ্রাম। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হয়।
জানা গেছে, গত ৬ মাসে আকন্দবাড়িয়া গ্রামের মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন থানা ফাঁড়িসহ দেশের বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মাদকের মামলা হয়েছে। ভারত থেকে সীমান্ত পথে মাদকদ্রব্য বহন করে আনার সময় বিএসএফ’র গুলিতে কতোজনকে জীবন দিতে হয়েছে তার সঠিক হিসেব কেউ বলতে পারেনি। আকন্দবাড়িয়া গ্রামকে তমাল বৃক্ষের মতো সুন্দর করতে প্রয়োজন পুলিশের কঠোর ভূমিকা ও গ্রামবাসীর আন্তরিকতা। তাহলে হয়তো মাদকের কালো থাবা থেকে রক্ষা পাবে যুব সম্প্রদায়। রোধ হবে সামাজিক অবক্ষয়। গ্রামের দূর্নাম ঘুচে সুনামের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবে আকন্দবাড়িয়ার নাম। সেই সাথে ফুলে-ফলে ভরে উঠতে পারে তমাল গাছটি এমনই প্রত্যাশার প্রহর গুনছে আকন্দবাড়িয়াবাসী। সেক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গা-৬ বর্ডার গার্ডের পরিচালক লে. কর্নেল আমির মজিদ ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনসহ প্রশাসনের কর্তাদের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি গ্রামের সর্বস্থরের মানুষের।