৮ লক্ষাধিক কর্মী বিদেশ পাঠানো হবে এ বছর : প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিদায়ী বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবমিলিয়ে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর কর্মী বিদেশ গমনের হার ৩৬ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি ছিল। একই সময়ে দক্ষ কর্মীর বিদেশ যাওয়ার হার বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর ৮ লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দক্ষ পুরুষ ও মহিলাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানও চলবে।

রোববার ইস্কাটনে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বের ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৫ লাখ কর্মী রয়েছেন। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও প্রবাসী কর্মীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে এ মন্ত্রণালয়। সরাসরি অভিযোগ ও সমস্যা জানানোর জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস বন্ধু কল। ২০১৬ সালে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য অর্জন ও অন্যান্য কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় প্রেস ব্রিফিংয়ে। এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়া থেকে ডিমান্ড নোট পেলেই কর্মী পাঠানো হবে। সেই প্রস্তুতি রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর জন্য অভিবাসন ব্যয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে। কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি টাকা নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অভিবাসনসংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ।

মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর ৮ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে। এছাড়া নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানসহ যেসব দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন তাদের সেবা ও কল্যাণ নিশ্চিতে শ্রম উইং খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। গৃহকর্মী ও গার্মেন্ট খাত ছাড়াও অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতে দক্ষ মহিলাকর্মী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। চেষ্টা করব যাতে ২০১৬ সালের তুলনায় এ বছর বেশিসংখ্যক দক্ষ মহিলা ও পুরুষকর্মী বিদেশে পাঠানো যায়। বিদেশে কর্মরত কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রচলিত শ্রম বাজারের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে রাশিয়ায়, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া কূটনৈতিক তৎপরতায় বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী কর্মীদের বৈধ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫-এর তুলনায় ২০১৬ সালে ৩৬ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি কর্মী বিদেশে গমন করেছেন। ওমানে সর্বোচ্চসংখ্যক ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৭ জন এবং তার পরই সৌদি আরবে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৩ জন কর্মী গমন করেছেন। জেলাভিত্তিক বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, কুমিল্লা জেলা থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক ৮৬ হাজার ৩৫২ কর্মী বিদেশে গমন করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে ৪৫ হাজার ৭৮০ কর্মী বিদেশে গেছেন। এছাড়া সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে সৌদি আরব থেকে ২ হাজার ৯৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার পরই এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২ হাজার ৫৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীরা বেতন বেশি হয় এবং রেমিটেন্স বাড়ে মন্তব্য করে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আমরা সবসময় দক্ষ কর্মী তৈরি ও পাঠানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছি। ২০১৬ সালে ৬টি আইএমটি ও ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ৭০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৪৮টি ট্রেডে ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মীকে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ৪০টি উপজেলায় ৪০টি টিটিসি স্থাপনের কাজ চলছে এবং আরও ৫০টি উপজেলায় ৫০টি টিটিসি স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৫-এর তুলনায় ২০১৬ সালে ৪৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি দক্ষ কর্মী কর্মসংস্থান নিয়ে বিদেশে গমন করেছেন।

কর্মীদের ভোগান্তি কমাতে মন্ত্রণালয়ের নেয়া উদ্যোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্র ও স্মার্ট কার্ড প্রদান শুরু করেছি। এছাড়াও বিএমইটি ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, রংপুর, যশোর ও বরিশাল থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রবাসীকর্মীর পরিবার ও স্বজনদের প্রবাসীকর্মীর কাছে গমনপূর্বক স্বল্প সময়ে অবস্থানের জন্য বিএমইটির বহির্গমন শাখা হতে ‘জয়েনিং রিলেটিভ’ হিসেবে অনাপত্তিপত্র দেয়া হচ্ছে। এ সেবা বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও অসুস্থ, মৃত কর্মী ও তাদের পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ সেবা যুক্ত করা হবে।

প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস বন্ধু কল’ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীরা যেন সরাসরি তাদের অভিযোগ ও সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সৌদি আরব, জর্ডান মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ২৫ লাখ কর্মী সরাসরি +০৯৬৫৪৩৩৩৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সেবা পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশেও এ সেবা চালু করা হবে। তাছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান দূতাবাসে হটলাইন চালু হয়েছে।
বিদেশগামীদের হয়রানি ও অবৈধভাবে কর্মী বিদেশ পাঠানোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থান রয়েছে জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ২৩ সদস্য বিশিষ্ট ভিজিলেন্স টাস্কফোর্স অবৈধভাবে বিদেশে কর্মী প্রেরণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং ৪টি রিক্রুটিং এজেন্সি ও মেডিকেল সেন্টারকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩-এর আওতায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

Leave a comment