মেহেরপুরের আমঝুপিতে মেলার নামে জুয়া ও লটারি-বাণিজ্য

হাতিয়ে নিচ্ছ লাখ লাখ টাকা : তরুণদের প্রতিবাদের মুখেও নীরব কেন প্রশাসন?
স্টাফ রিপোর্টার:  মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে চলছে জমজমাট লটারির আসর। মেলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধ লটারির লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য চলছে। এমন অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু তরুণ সোচ্চারও হয়েছে। তবে প্রশাসন লটারি বন্ধ না করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে সচেতন মহলে। অপরদিকে মেলা কেন্দ্র করে চরম বিপাকে পড়েছেন আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আমঝুপি পাবলিক ক্লাব ও লাইব্রেরির সভাপতি বোরহান উদ্দীন চুন্নুর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ দিনের মেলার অনুমোদন দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রশিদুল মান্নাফ কবীর। লিখিত অনুমোদনপত্রে ৯টি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে জুয়ার আসর ও মাদকমুক্ত রাখা, গভীর রাতে উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো শর্ত দুটি অন্যতম। অপরদিকে লটারি খেলার কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি ওই অনুমোদনপত্রে। তাহলে কিভাবে চলছে এই লাখ লাখ টাকার খেলার অবৈধ লটারি? গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইকে উঠাও বাচ্চা শব্দে বিরক্ত আশেপাশের লোকজন। ক্যাবল টিভিতেও সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে লটারির প্রতিদিনের চূড়ান্ত পর্বের খেলা। এর পরেও কি প্রশাসনের নজরে পড়ছে না? তাহলে কি সরষ্যের মধ্যেই ভূত? এ প্রশ্ন এখন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে।
স্থানীয়দের মতে, মেলা মানে আনন্দ, মেলা মানে খুশি, মেলা মানে হরেক রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। আমঝুপি মেলার মাঠে কি এর কোনটি আছে? তাহলে কিসের জন্য মেলা? কাদের স্বার্থে এই মেলার নামে লটারির জমজমাট ব্যবসা? এমন প্রশ্ন ছুড়ে আমঝুপি গ্রামের কয়েক তরুণ জানালেন, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লটারির রিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা। আমঝুপির দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসার দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, সারাদিন অসংখ্য মাইক গ্রামের অলিগলিতে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে লটারির টিকিট বিক্রি করছে। রাত বারোটা অবধি একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মেলার বন্ধে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, গতরাতেও শতাধিক লটারির টিকিট বিক্রির বাক্স খোলা হয়। প্রতিটি বাক্সের টিকিট বিক্রেতারা মাইকিং করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টিকিট বিক্রি করছেন। এতে এক প্রকার শব্দ দূষণে এলাকার মানুষ বিরক্ত হলেও মগের মুল্লকের মতোই যেন কিছুই করার নেই অবস্থা।
লটারিতে মোটরসাইকেল পুরস্কারের আশায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ২০ টাকা মূল্যমানের কয়েকটি করে টিকিট ক্রয় করছেন। এর মধ্যে শিশু ও খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যই বেশি। এতে একদিকে যেমন শিশুরা ভাগ্য পরীক্ষার নামে এক ধরনের জুয়া খেলায় আসক্ত হচ্ছে অপরদিকে দিনমজুর শ্রেণির মানুষ সংসারে অভাব বাড়ছে। পকেট ভারী হচ্ছে লটারির সাথে সম্পৃক্তদের। তাই এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মেলা বন্ধের দাবি জানালেন স্থানীয় অনেকেই। তবে মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি বোরহান উদ্দীন চুন্নু বিশেষ কাজে ভারতে অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a comment